ধুনটে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার তালিকায় আ.লীগ-যুবলীগ নেতাদের নাম

পৌরসভা নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তার তালিকায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পদধারী দুই নেতা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তালিকায় এমন দুজন আছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য।

ভোট গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া এই চারজন নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় ভোট চাইছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী এ জি এম বাদশাহ্‌। তিনি আজ সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করে এই চারজনের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছেন।

৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ধুনট পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকী নিয়ে নির্বাচন করছেন টি আই এম নুরুন্নবী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলের ‘বিদ্রোহী’ হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন এ জি এম বাদশাহ্‌। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য) ও বর্তমান মেয়র। নির্বাচনে তাঁর প্রতীক জগ।

অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ্ বলেন, ‘মেয়র প্রার্থীর অভিযোগটি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তাঁর অভিযোগের সত্যতা মিললে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ ভোটগ্রহণের দায়িত্বে দলীয় পদধারীদের থাকার সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, দলীয় কেউ ভোট গ্রহণে থাকতে পারবে না। তাঁদের কেবল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যাচাই–বাছাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ জি এম বাদশাহ্‌র অভিযোগ, নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য ৯ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ধুনট মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ফরিদুল ইসলাম, জি এম সি কলেজের প্রভাষক মেহেদী হাসান, মজনু আলম সরকার ও জাহাঙ্গীর আলমের নাম রয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

এ জি এম বাদশাহ্‌র অভিযোগ, ফরিদুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। মেহেদী ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলামের ছেলে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম ধুনট উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। মজনু আলম সরকার নৌকার প্রার্থী টি আই এম নুরুন্নবীর ভাতিজা। তাঁরা চারজনই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে সশরীরে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন।

বগুড়া জেলা প্রশাসক এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া অভিযোগে এ জি এম বাদশাহ্‌ উল্লেখ করেছেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পদে প্রশিক্ষণ নেওয়া চার কর্মকর্তা নৌকার পক্ষে কাজ করায় তাঁদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব দিলে ভোট জালিয়াতি হবে, অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি ওই চারজনকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার আবেদন জানান।

জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পদে মনোনীত ফরিদুল ইসলাম ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি ভোট চাওয়ার অভিযোগ মনগড়া দাবি করে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এখানে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রমাণ দিতে পারলে নিজেই ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইবেন।

জি এম সি ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমও ধুনট উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি পদে থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষকতা করার কারণে সংগঠনে সক্রিয় নন। আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন থাকলেও পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচারণায় অংশ নেননি।

জি এম সি ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মজনু আলম সরকার বলেন, তাঁর পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও দলীয় পদে কেউ নেই। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভাতিজা নন, প্রতিবেশী। প্রচারণাতেও অংশ নেননি।

একই কলেজের আরেক প্রভাষক মেহেদী হাসান বলেন, পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও তিনি কোনো পদে নেই। প্রচারেও অংশ নেননি। তাঁর বাবা পদে থাকার কারণে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযোগ তুলেছেন।