ধুনটে স্বামী-সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল পোশাকশ্রমিকের, আটক ২

বগুড়ার ধুনটে প্রতিপক্ষের মারপিটে নিহত পোশাকশ্রমিকের বাড়িঘর ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষের লোকজন
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় সমাজচ্যুত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝলকি খাতুন (৩৬) নামের এক পোশাকশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম গুয়াডহুরী গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ যুবদলের নেতা ও তাঁর লোকজনের মারপিটে আহত হন ঝলকি। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ঝলকি উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম গুয়াডহুরী গ্রামের জিল্লুর রহমান ওরফে মোহনের স্ত্রী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রুহুল আমিন ওরফে রতন (৪৫) নামের যুবদলের এক নেতাসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক রুহুল আমিন গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ও পশ্চিম গুয়াডহুরী গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝলকি খাতুন প্রায় ১৮ বছর ধরে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁর স্বামী জিল্লুর রহমান প্রতিবন্ধী ছেলে মিলন রহমানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঝলকি ঈদের ছুটিতে গতকাল দুপুরে স্বামীর বাড়িতে আসেন। প্রায় তিন মাস আগে প্রতিবেশী এক বিধবা নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে জিল্লুর রহমানের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেন যুবদলের নেতা রুহুল আমিন। এতে রুহুল আমিনের ওপর ক্ষুব্ধ হন জিল্লুর রহমান। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাড়ির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসার জন্য জিল্লুর রহমানের বাড়িতে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে হাতাহাতির একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ জিল্লুর রহমানের ছুরিকাঘাতে আহত হন রুহুল আমিন।

এলাকার বাসিন্দারা আরও জানান, রুহুল আমিন ছুরিকাহত হওয়ার পর এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে রুহুল আমিন মারা গেছেন। এতে তাঁর সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে জিল্লুর রহমান, ছেলে মিলন রহমান ও ছোট ভাই মিজানুর রহমানকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় স্বামী-সন্তান ও দেবরকে বাঁচাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের মারপিটে আহত হন ঝলকি খাতুন। পরে হাসপাতালে মারা যান।

একই সময়ে ছুরিকাহত রুহুল আমিন, তাঁর স্ত্রী নাছিমা খাতুন, প্রতিবেশী লিটন ও সোহেল রানাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে ঝলকির মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ যুবদলের নেতা রুহুল আমিন ও প্রতিবেশী লিটন মিয়াকে আটক করে। বর্তমানে পুলিশি পাহারায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন যুবদলের নেতা রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সালিস বৈঠকে ছুরিকাঘাতে আমার মৃত্যুর খবরে গ্রামবাসী জিল্লুর রহমান ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে মারপিট করেছেন। আমি কাউকে মারধর করিনি।’

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হবে।