ধূমপান নিয়ে তরুণীকে হেনস্তা করায় ‘প্রতিবাদী আড্ডা’

রাজশাহী নগরের সার্কিট হাউস সড়কের পাশে বসে ধূমপান করায় গত রোববার স্থানীয় লোকজন এক তরুণীকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকেলে একদল তরুণ-তরুণী ওই একই জায়গায় জড়ো হয়ে ‘প্রতিবাদী আড্ডা’ দিয়েছেন।

গত রোববারের ঘটনার প্রতিবাদে একজন তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানান। শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেখানে একদল তরুণ-তরুণী গিয়ে ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শুক্রবার প্রতিবাদে অংশ নেওয়া তরুণ–তরুণীদের স্থানীয় কিছু মানুষ প্রতিহত করতে যান। কিন্তু তাঁরা সেখান থেকে সরে যাননি। তাঁরা বলেছেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী এই জায়গা ‘পাবলিক প্লেস’ নয়। অভ্যাস থাকলে ছেলে বা মেয়ে যে কেউ এখানে ধূমপান করতে পারেন। একজন নারীকে এখানে ধূমপান করার জন্য এভাবে হেনস্তা করা অন্যায়। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, ধূমপানকে উৎসাহিত করা তাঁদের লক্ষ্য নয়, তাঁরা এসেছেন একজন নারীকে হেনস্তা করার প্রতিবাদ জানাতে।

গতকালের প্রতিবাদের সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি এসে বলেন, এটা তাঁদের এলাকা। পাশেই সার্কিট হাউস। এটা ভিআইপি সড়ক। এখানে ধূমপান করা যাবে না। পরে তিনি বলেন, ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। কেউ করলে নিজের বাসায় করবেন। এখানে এসে করতে পারবেন না। এ নিয়ে ওই ব্যক্তি ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে কিছুক্ষণ বিতর্ক হয়। এ সময় আশপাশে অনেক মানুষ জড়ো হন।

প্রতিবাদে নেতৃত্বদানকারী এক তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ। সংজ্ঞা অনুযায়ী এই সড়ক পাবলিক প্লেস নয়। এখানে যে কেউ ধূমপান করলে তা আইনত দণ্ডনীয় হবে না। তাঁরা ধূমপানকে উৎসাহিত করার জন্য সেখানে যাননি। আগের দিনের ঘটনার প্রতিবাদে এখানে আড্ডা দিতে এসেছেন।

গত রোববার বিকেলে এক তরুণের সঙ্গে সার্কিট হাউস সড়কের পাশে ফুটপাতের বেঞ্চে বসে ধূমপান করছিলেন এক তরুণী। তখন তাঁকে প্রথমে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাধা দেন। তিনি ওই তরুণীর সঙ্গে উগ্র আচরণ করে তাঁকে ওই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন ওই তরুণীর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন।

এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার জড়ো হন অনেক তরুণ–তরুণী।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ধূমপান করার সময় তরুণ-তরুণীর ওপর চড়াও হন এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে আরও কিছু মানুষ জড়ো হন। তাঁরাও চড়াও হন ওই তরুণ-তরুণীর ওপর। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁদের উঠে যেতে বলেন। এ সময় তরুণী তাঁদের প্রশ্ন করেন, ‘মেয়ে বলেই কি আমাকে উঠে যেতে বলছেন? মেয়ে বলেই আমাকে বাধা দিচ্ছেন?’

তখন ওই ব্যক্তি তরুণীকে বলেন, ‘হ্যাঁ মেয়ে বলেই বাধা দিচ্ছি।’ এ সময় আরেকজন বলেন, ‘এভাবে প্রকাশ্য মেয়েমানুষ ধূমপান করলে তাঁদের পাড়ার মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে। ভদ্রভাবে উঠে যেতে বলছেন, উঠে যান।’ তখন তরুণীর সঙ্গে থাকা তরুণ বলেন, সিগারেট ফেলে দেওয়া হয়েছে। এখন তো ধূমপান হচ্ছে না। এখন বসে থাকতে আপত্তি কেন? তখন প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘এক মুহূর্ত এখানে বসা যাবে না। এখনই উঠে যান।’

হেনস্তার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তায় কোনো নারী ধূমপান করলে কারও খারাপ লাগতে পারে, সেটা ভিন্ন বিষয়। খারাপ লাগলে তিনি ভদ্রভাবে বলতে পারেন, কিন্তু হেনস্তা করার অধিকার কারও নেই।