নকলায় আ.লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ২০

শেরপুরের নকলায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়| এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজারে
ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে চন্দ্রকোনা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. কামরুজ্জামানের ভাবি সালমা বেগমের নেতৃত্বে একদল কর্মী-সমর্থক চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের দড়িপাড়া এলাকায় প্রচারণা চালাতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাজু সাইদ সিদ্দিকীর কয়েকজন সমর্থক তাঁদের বাধা দেন ও আনারসের প্রচার বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

এ নিয়ে কামরুজ্জামানের ভাবি সালমা বেগমের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের কথা–কাটাকাটি হয়। সংবাদ পেয়ে সালমা বেগমের ছেলে সম্বিত তাঁর দুই সহযোগী শাহিন ও জাফরকে নিয়ে দড়িপাড়া এলাকায় যান এবং আনারসের প্রচারে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। পরে সংবাদ পেয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাজু সাইদ সিদ্দিকীও দড়িপাড়া এলাকায় যান। এ সময় উভয়পক্ষের কর্মী-সমর্থকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে সাজু সাইদ সিদ্দিকীর সমর্থকেরা কামরুজ্জামানের ভাতিজা সম্বিত ও তাঁর সহযোগীদের কাছে ‘অস্ত্র’ আছে দাবি করে তাঁদের আটক করেন এবং পুলিশে সংবাদ দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের চন্দ্রকোনা তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
এদিকে সম্বিতসহ তিনজনকে আটকের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ‘বিদ্রোহী’ কামরুজ্জামানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে চন্দ্রকোনা বাজার থেকে দড়িপাড়া এলাকায় যাওয়ার প্রস্ততি নেন।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সাজু সাইদ সিদ্দিকীর সমর্থকেরাও চন্দ্রকোনা বাজারে আসেন। এ সময় উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী কামরুজ্জামানের বড় ভাই চন্দ্রকোনা কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলামসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় চন্দ্রকোনা বাজারসংলগ্ন এলাকায় নৌকা প্রতীকের একটি নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়।

সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. হান্নান মিয়া ও নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য চন্দ্রকোনা বাজারে গিয়ে ১০ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাজু সাইদ সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্রোহী’ কামরুজ্জামানের সমর্থকেরা তাঁর গ্রামের বাড়ি দড়িপাড়া এলাকায় অস্ত্র নিয়ে প্রচারের কাজ চালাতে যান এবং পরে তাঁর একটি নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র ভাঙচুর করেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কোনো কর্মী বা সমর্থকের কাছে অস্ত্র ছিল না। তাঁর কোনো লোক নৌকার প্রচারকেন্দ্র ভাঙচুর করেননি। এসব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

ওসি মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। চন্দ্রকোনা বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।