নকশা পরিবর্তন করে ১৮টি বসতভিটার ওপর দিয়ে হচ্ছে বেড়িবাঁধ

ভিটাবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হওয়ার আশঙ্কায় সত্তরোর্ধ্ব অনিল দাস। বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ঋষিপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের ধারে
প্রথম আলো

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে নকশা পরিবর্তন করে ১১টি ঋষি পরিবারসহ ১৮ পরিবারের বাড়িঘর কপোতাক্ষ নদের দিকে রেখে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এভাবে বাঁধ নির্মাণ করলে এসব পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী বাঁধটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও কোনো ফল হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থার মধ্যে কপোতাক্ষ নদের ধার ঘেঁষে ১৮টি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ১১টি ঋষি পরিবার (হরিজন সম্প্রদায়)। তারা অন্যের জমি চাষ করে কিংবা শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব ঋষি পরিবার ১২ বিঘা জমি ওপর ঝুপড়িঘরে চৌদ্দ পুরুষ ধরে বসবাস করে আসছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিবছর লড়াই করতে হয় তাদের প্রকৃতির সঙ্গে। কখনো গাছগাছালি ও বাড়িঘর ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে কিংবা ভেঙে যায়। আবার কখনো জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত। বসবাসের এই ১২ বিঘা জমি ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। বাঁধ দিলে তাদের চৌদ্দ পুরুষের ঠিকানা হারিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে পাউবো। ওই পরিবারের ভিটাবাড়ির ওপর থেকে ৪০-৪৫টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

নকশা পরিবর্তন করে ১১টি ঋষি পরিবারসহ ১৮ পরিবারের বাড়িঘর কপোতাক্ষ নদের দিকে রেখে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধ দিলে তাদের চৌদ্দ পুরুষের ঠিকানা হারিয়ে যাবে।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব অনিল দাস বলেন, গত বছরের ২০ মে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ও ২২ আগস্ট জলোচ্ছ্বাসে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের কুড়িকাহনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় এ এলাকার ১১টি ঋষি পরিবারসহ ১৮টি পরিবারের চাষের জমি ও চিংড়ির ঘের নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সরকারি কর্মকর্তারা তাদের বসতভিটা নদীর বাইরে রেখে বাঁধ সংস্কারের নকশা তৈরি করেন। কিন্তু পাউবোর কর্মকর্তারা ওই নকশা উপেক্ষা করে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন ছাড়াই ওই সব পরিবারের বসতভিটায় থাকা গাছগাছালি কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পরিবারগুলোকে রাস্তায় বসবাস করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

সাতক্ষীরার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সচিব আলী নূর খান বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না করে বসতভিটার ওপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ যাতে না করা হয়, এ জন্য মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর এলাকার দায়িত্বে থাকা পাউবোর শাখা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, নকশা একেবারে নদীর ধার দিয়ে করা হয়েছিল। বেড়িবাঁধ টেকসই করতে নকশার পরিবর্তন নয়, একটু ভেতর দিয়ে করা হচ্ছে। এ জন্য কয়েকটি পরিবারের সমস্যা হতে পারে। বৃহত্তর স্বার্থে এভাবে করা ছাড়া উপায় নেই।