নকশার ভুলে চার বছর ধরে বন্ধ সড়কের কাজ

২০১৬ সালের মে মাসে এই সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়। এতে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ঠিকাদার ছিলেন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা মিলন কান্তি দে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চেকনিকারা-ইছাগড়ি সড়কের কাজ চার বছর ধরে বন্ধছবি: প্রথম আলো

মাত্র তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক। সড়কটি পাকা করার জন্য ২০১৬ সালে সংস্কারকাজ শুরু হয়। কিছুদিন কাজ চলার পর বন্যায় এর বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানায়, কাজের নকশায় ত্রুটি আছে। এরপর থেকে কাজ বন্ধ।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের চেকনিকারা সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে সড়কটি গেছে মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ইছাগড়ি গ্রাম পর্যন্ত। সড়ক দিয়ে দুটি ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। সড়কের কাজ না হওয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী।


সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে হাওর। চেকনিকারা এলাকা থেকে সামনের দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার অংশ পাকা করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে নির্মাণ করা পাকা প্রতিরক্ষা দেয়াল হাওরের ঢেউয়ে ভেঙে গেছে। একইভাবে বিভিন্ন অংশে মাটি ধসে যাওয়ায় কাদাপানি জমে আছে। সড়কের ইসলামপুর এলাকায় একটি কালভার্টের সংযোগ সড়কে বন্যায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় সেখানে লোকজন বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন চলাচলের জন্য।

স্থানীয় লোকজন ও এলজিইডি সূত্র জানায়, এই সড়ক দিয়ে লক্ষণশ্রী ও মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ইসলামপুর, রৌয়ারপাড়, কলাউড়া, নোয়াগাঁও, হালুয়ারগাঁও, গোয়াচুরা, ইছাগড়ি ও শান্তিপুর গ্রামের মানুষ সহজে জেলা শহরে যাতায়াত করতে পারে। ২০১৬ সালের মে মাসে এই সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়। এতে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ঠিকাদার ছিলেন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা মিলন কান্তি দে।


সড়কের কাজ শুরু হওয়ার মাসখানেক পরই বন্যা আসে। বন্যার পানিতে নতুন করে কাজ করা পাকা অংশসহ দুই পাশে বেশ কিছু অংশের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙে যায়। এরপর সড়ক দিয়ে চলাচলে ভোগান্তি আরও বাড়ে। ঠিকাদার ও এলজিইডির লোকজন বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার কাজ করবেন জানালেও পরে আর কাজ হয়নি। এরপর এলাকাবাসী ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এলজিইডি তাঁকে জানিয়েছে কাজের নকশা ভুল আছে, তাই নতুনভাবে নকশা ও প্রাক্কলন হওয়ার পর কাজ হবে। কিন্তু গত চার বছরে আর কাজ হয়নি।


ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান (৬৭) বলেন, ‘আমরা খুবই দুর্ভোগে আছি। মাটির রাস্তাই ভালা ছিল। এখন জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে আছে। চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে।’


একই গ্রামের বাসিন্দা কলেজছাত্র রুবেল আহমদ ক্ষোভ বলেন, এখন নৌকায় চলাচল করতে হয় তাঁদের। নকশায় ভুল হলে সেটা সংশোধন করতে চার বছর লাগবে কেন? এখানে নিশ্চয়ই কারও গাফিলতি আছে।

লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নকশার ভুলের কথা বলে এত দিন কাজ বন্ধ রাখার পেছনে অবহেলা আছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কটি সংস্কার হলে দুটি ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি সড়কটি হাওরের মাঝ দিয়ে গেলে মানুষ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।

ঠিকাদার মিলন কান্তি দে বলেন, বন্যার এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে কাজ পরিদর্শন করেন। এরপর নকশায় ভুল আছে বলে তাঁর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি যে টাকার কাজ করেছেন, সেই টাকা এখনো পাননি।

এলজিইডির সুনামগঞ্জ সদর প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত বন্যায় সড়ক ভেঙে যাওয়ার পরই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিকাদারকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। পুরোনো নকশায় কাজ হলে সড়ক টিকবে না। এখন নকশা সংশোধন করে আবার নতুন করে কাজ হবে। এ জন্য ছয় কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। এটি অনুমোদন হওয়ার পর বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার কাজ শুরু হবে।