নগরকান্দা পৌরসভা ২১ বছর ধরে ভাড়া করা ভবনে

জেলা পরিষদ থেকে একতলা ভবন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ১৮ বছর ধরে এ ভাড়া পরিশোধ করা হয় না।

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর পেরিয়ে গেছে ২১ বছর। এত বছর পরও এ পৌরসভার নিজস্ব কোনো ভবন হয়নি। পৌরসভার কার্যক্রম চলছে ভাড়া বাড়িতে। শুরুর পর বছর তিনেক জেলা পরিষদের কাছে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হলেও গত ১৮ বছরে কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বকেয়া পড়েছে আট লক্ষাধিক টাকা।

উপজেলা সদরে জেলা পরিষদের পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবনে (ডাকবাংলো) শুরু হয় পৌরসভার কার্যক্রম। মাসিক ভাড়া নির্ধারিত হয় তিন হাজার টাকা। বর্তমানে ভবনটি আরও বেশি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের পূর্ব পাশের কক্ষে বসেন মেয়র। পশ্চিম পাশের কক্ষে সচিব। উত্তর পাশের একটি কক্ষে অফিস সহায়ক নাগরিকদের বিভিন্ন সনদ দেওয়ার কাজ করেন। উত্তর পাশের আরেকটি কক্ষে জমিসংক্রান্ত কার্যক্রম হয়। মাঝের কক্ষে করসংক্রান্ত কাজ চলে। এখানে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের বসার ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি বেঞ্চ পাতা। ভবনের ছাদে বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খুলে পড়েছে। সামনের অংশে রড বের হয়ে গেছে। পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবন ধসে যাওয়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কাজ করছেন মেয়রসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী।

পৌর ভবনের এই হাল দেখে সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মলয় কান্তি বিশ্বাস (১৯) বলেন, নগরকান্দার অন্য সব ইউনিয়নেও এর চেয়ে ভালো ভবন আছে।

তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নগরকান্দা পৌরসভায় ৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমানে কর্মরত আছেন স্থায়ী ৬ জন ও অস্থায়ী ১০ জন। এই ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই চলছে পৌরসভার কার্যক্রম।

জেলা পরিষদের কাছে প্রায় আট লাখ টাকা বকেয়া আছে। নতুন ভবনের জন্য ৫২ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
নিমাই সরকার, ভারপ্রাপ্ত মেয়র, নগরকান্দা পৌরসভা

১৯৯৯ সালে ৭ দশমিক ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নগরকান্দা উপজেলার নগরকান্দা ইউনিয়ন ও লস্করদিয়া ইউনিয়নের অনেকাংশ ভেঙে নগরকান্দা পৌরসভা গঠন করা হয়। ওই সময় নগরকান্দা নামের ইউনিয়নটি কোদালিয়া-শহীদনগর ইউনিয়ন হিসেবে নামকরণ করা
হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী জিল্লুর রহমান এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রায় ২৬ হাজার পৌরবাসী অধ্যুষিত নগরকান্দা পৌর এলাকায় উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়াই লাগেনি গত ২১ বছরে। পৌর সুবিধার মধ্যে সড়কবাতি আর অতি সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের কাজ এখন চলমান।

পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত মধ্যজগদিয়া মহল্লা। এখানে প্রায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় পানি আটকে ছিল। মধ্যজগদিয়া মহল্লার বাসিন্দা ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সজ্জিতা বিশ্বাস (২২) বলেন, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বর্ষার তিন মাস তাঁদের একপ্রকার গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়।

২০০০, ২০০৫, ২০১১ ও ২০১৫ সালে এ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ মেয়র নির্বাচিত হন রায়হান উদ্দিন মিয়া। গত ৫ মে তিনি মারা যান। পরে এক নম্বর প্যানেল মেয়র নিমাই সরকারকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। করোনার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়েই চলছে পৌরসভা।

পৌরসভার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিমাই সরকার বলেন, ‘নাগরিকসেবা যতটুকু দিতে চাই, ততটুকু দিতে পারছি না।’

আর ভাড়া বকেয়ার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, জেলা পরিষদের কাছে প্রায় আট লাখ টাকা বকেয়া আছে। নতুন ভবনের জন্য ৫২ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। দরপত্র আহ্বান করে কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হবে।