‘নতুন গুহায়’ পর্যটকের পা

দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া গেছে এই গুহার সন্ধান। যাওয়ার পথের পরতে পরতে রোমাঞ্চ, আছে ঝুঁকিও।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের গহিন অরণ্যে সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গুহার শেষ প্রান্তে দুই পর্যটক। গত শনিবার বিকেল চারটায়
ছবি: প্রথম আলো

গুহার মুখ দেখলেই গা ছমছম করে। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মশাল জ্বালিয়ে ভেতরে যেতেই পানি। পানি মাড়িয়ে ঢুকতে হয় গুহায়। সামনে যতই পা চালাবেন, ততই গা শিউরে উঠবে। আধা কিলোমিটারের এই সুড়ঙ্গের শেষ মাথাটা খুবই সরু। বের হওয়ার তেমন উপায় নেই। ফিরতে হবে একই পথে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের পটিয়ার সামীন্তবর্তী গহীন অরণ্যে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া গেছে এই সুড়ঙ্গের সন্ধান। স্থানীয় লোকজন এটিকে ‘বাদুড় গুহা’ বলে থাকেন। কারও কারও মতে, গুহাটি অন্তত দেড়শ বছর আগে সৃষ্ট। তবে বেশি মানুষের মধ্যে জানাজানি হয় বছরখানেক আগে। করোনা–পরবর্তী সময়ে এখন সেখানে উৎসুক মানুষের আনাগোনা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই হয়ে ৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে ওই জায়গায়। আর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর থেকে গোডাউন সরফভাটা কালিন্দি রানী সড়ক হয়ে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে জায়গাটি। পদুয়া ইউনিয়নের পেকুয়াপাড়া গ্রাম পর্যন্ত যানবাহনে যাওয়া যায়। সেখান থেকে ‘ভান্ডালজুড়ি’ ছড়া দিয়ে হেঁটে পাহাড়ি উঁচু নিচু পথ বেয়ে গুহায় পৌঁছাতে হয়। পেকুয়াপাড়া থেকে বাদুড় গুহার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। এই পথের পরতে পরতে রয়েছে রোমাঞ্চ, আছে ঝুঁকিও। গুহায় প্রবেশের জন্য পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ খাদ বেয়ে নিচে নামতে হয়।

গত শনিবার বেলা ১১টায় গুহার সন্ধানে এই প্রতিবেদক পদুয়া ইউনিয়নের পেকুয়াপাড়ায় পৌঁছান। সেখানে খোঁজ পাওয়া যায় সাইমন মারমা নামের এক ব্যক্তির, যিনি পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করেন। সাইমন মারমার দেখানো পথে কখনো উঁচু পাহাড় থেকে ছড়া, আবার কখনো ছড়া থেকে উঁচু পাহাড় পর্যন্ত হেঁটে গুহার মুখ পর্যন্ত পৌছাতে বেলা দুইটা।

সাইমন মারমার ভাষ্য, ১৫০ বছর আগে স্থানীয় মানুষেরা গুহাটি দেখতে পান। বছরখানেক ধরে কৌতুহলী লোকজন গুহাটি দেখতে আসছেন। তাঁর মতে, একসময় গুহায় প্রচুর বাদুড় ছিল। যাওয়ার পথে হিংস্র জীবজন্তুর ভয়ও ছিল। এখন জীবজন্তু নেই, তেমন বাদুড়ও দেখা যায় না। তবে মাঝেমধ্যে বন্যহাতির উপদ্রব রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এ গুহা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক আল হাসান ওরফে মঞ্জু। ৩০ জনের একটি দল নিয়ে তিনি গুহা দেখতে আসেন। এই দলের সঙ্গে ছিলেন এই প্রতিবেদক। গুহা থেকে বেরিয়ে আল হাসান বলেন, পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে গুহায় নামতে পা পিছলে গভীর খাদে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। তাই আগে প্রস্তুতি নিয়ে এখানে আসতে হবে। নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া এখানে হাঁটা খুব বিপজ্জনক। রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরাই কেবল এখানে আসতে পারেন।

স্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকা রূপালি রাঙ্গুনিয়া’র সম্পাদক ও ইতিহাস গবেষক এনায়েতুর রহিম বছরখানেক আগে এই গুহা দেখতে গিয়ে ফিরে যান। সর্বশেষ গত মাসের মাঝামাঝি তাঁর গুহায় যাওয়ার সুযোগ হয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রহস্যজনক গুহা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা হওয়া দরকার।