নদী ভরাট করে সড়ক

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নদী ভরাট করে চলছে সড়ক নির্মাণ। গত সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের মহেশখালীর মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে যেন মিশে রয়েছে কোহেলিয়া নদীটি। মহেশখালী দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গিয়ে নদীটি বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। সেই অনাদিকাল থেকে মহেশখালীর বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের বেশির ভাগই কোহেলিয়া দিয়েই হয়ে আসছে। এখন নদীর তীর ভরাট করে রাস্তা তৈরির কার্যক্রম চলায় বড় নৌকাগুলো চলতে পারছে না। প্রাণ আর পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কায়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য কোহেলিয়ার বুক ভরাট করে তৈরি হচ্ছে পাকা সড়ক। সাড়ে সাত কিলোমিটারের সড়কটির অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পড়েছে নদীর তীরের অংশে। ৮০ ফুট প্রস্থের সড়কটি নির্মাণের জন্য নদীর তীরের কোথাও ৩০ ফুট, কোথাও আবার ৫০ ফুট করে ভরাট করা হয়েছে।

জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সব দেখেশুনে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। নকশা অনুযায়ীই তাঁরা কাজ করছেন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, একসময়ের খরস্রোতা এই নদীতে মাছ ধরতেন কয়েক শ মৎস্যজীবী। এখন তাঁরা বেকার। স্থানীয় ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কোহেলিয়া নদীটি খননের। কিন্তু খনন না করে উল্টো ভরাট করায় জীবন-জীবিকার সংকটে পড়েছেন বহু মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহেশখালীর লবণ, মাছ, শুঁটকি এই নদী দিয়ে কার্গো বোঝাই করে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হতো। এখন তা-ও বন্ধ। নদীর দুই তীরে অন্তত ১ হাজার একর জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে লাখ লাখ মণ লবণ। এ লবণ ভিন্ন পথে পরিবহনের ক্ষেত্রে চাষিদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে প্রতি মণে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

গত শনিবার দুপুরে মাতারবাড়ী এসেছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) কক্সবাজারের আরও কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা। প্রকাশ্যে নদী ভরাটের দৃশ্য দেখে মর্মাহত হয়েছেন জানিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে কোহেলিয়া নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদী ভরাট করে উন্নয়নের কথা কখনো বলেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে ভুল তথ্য দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করছে, যা নদীসংক্রান্ত আইনবিরোধী।

নদীর পাশ দিয়ে সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রকল্প অনুমোদনের আগে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শফিক রায়হানের। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রে যেসব শর্ত ছিল, সেখানে নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। গত মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে তিনি ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে নদী ভরাট না করতে বলেছেন ও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।