নদীতে রাস্তা নির্মাণ, পানি পাচ্ছে না সেচ প্রকল্প

বালুঘাট ইজারা নিয়ে ইট দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করে ব্যবহার করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম।

  • পিরিজপুর সারফেস ওয়াটার নামে প্রকল্প চালু করতে খরচ হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা।

  • গভীর নলকূপের পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকেরা অল্প টাকায় এক বিঘা জমিতে সেচ–সুবিধা পেতেন।

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ২০১৭ সালে চালু হয় ‘পিরিজপুর সারফেস ওয়াটার প্রকল্প’। স্থানীয় কৃষক এবং একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এটি চালু করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা নদীর পানি দিয়ে শুকনা মৌসুমে বরেন্দ্রভূমিতে সেচ দেওয়া। কিন্তু প্রকল্প এলাকার উজানে পদ্মা নদীতে রাস্তা নির্মাণ করে বালু তোলায় বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ। এতে সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

বালুঘাট ইজারা নিয়ে ইট দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করে ব্যবহার করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম। তিনি বলছেন, রাস্তার কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না; বরং নদীর প্রবাহই অন্যদিকে সরে গেছে।

কৃষক ও বেসরকারি সংস্থা ডাসকো ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সারফেস ওয়াটার প্রকল্প চালু করতে খরচ হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা। পিরিজপুরে পদ্মার পাড় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে নদী থেকে পানি তুলে প্রায় ৩৫ ফুট উঁচু বরেন্দ্রভূমিতে সেচ দেওয়া হতো। বরেন্দ্রভূমিতে গভীর নলকূপের পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকেরা ১ হাজার ৩০০ টাকায় এক বিঘা জমিতে সেচ–সুবিধা পেতেন।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এর মাধ্যমে প্রায় চার হাজার বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব। কৃষকেরা ২৩৫ বিঘা ধানের জমিতে সেচ দেন। বর্তমানে পানি না পাওয়ায় নদীর ধারেই একটি গভীর নলকূপ বসিয়ে খেতে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গত শুক্রবার পিরিজপুরে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত বছর যেখান থেকে পানি তোলা হয়েছিল, সেখানে ছোট্ট একটা জায়গায় অল্প পানি জমে আছে। নদীর উজান থেকে পানি আসার পথ ভরাট হয়ে গেছে। প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম জানান, চার-পাঁচ বছর ধরে পিরিজপুর থেকে দুই কিলোমিটার উজানে ফুলতলায় পদ্মা নদীর ভেতরে রাস্তা তৈরি করে বালু তোলা হয়। রাস্তা নির্মাণে ইট ব্যবহার করা হয়েছে। নদীতে পানি আসার আগে এই রাস্তা অপসারণ করা হয় না।

শফিউল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে রাস্তার কারণে প্রকল্প এলাকায় পানি আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর ভেতর রাস্তা করার আগে কখনো এই এলাকার পানি শুকায়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল প্রথম আলোকে বলেন, পানি থাকুক আর না থাকুক, নদীর জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। এটা দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। তাঁকে জায়গাটি চিহ্নিত করে দিতে হবে। যদি দেখা যায়, রাস্তার কারণে পদ্মার পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তাহলে বর্ষায় নয়, এখনই রাস্তা অপসারণের ব্যবস্থা করবেন।

সরেজমিনে রাস্তাটি দেখতে যাওয়ার খবর শুনে প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে আসেন বালুঘাটের ইজারাদার ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম। তিনি বলেন, এই রাস্তা খেয়াঘাটে যাওয়ার জন্য করা। তাঁরা বালু তোলার জন্য সংস্কার করে ব্যবহার করেন মাত্র। এ ছাড়া পানির প্রবাহ যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সে জন্য রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপ দেওয়া হয়েছে। নদীর গতিপথ সরে যাওয়ায় পানি আসছে না। এটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। বাঁধের কারণে প্রকল্পে পানি যাওয়া বন্ধ হয়নি।

আজিজুল আলম বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারদরের মাধ্যমে ঘাট ইজারা নিয়েছেন। বিনিয়োগটা তুলতে না পারলে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।