নন্দীগ্রামে আ.লীগ নেতার হাতে উপজেলা চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত

আজ দুপুরে চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে দলীয় নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ। সেখানে উপস্থিত হন ভাটগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী। দলীয় কোন্দল নিয়ে দুজনই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জুলফিকার আলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউলের ওপর চড়াও হন।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ।
সংগৃহীত

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ নিজ উপজেলার একজন আওয়ামী লীগ নেতার হাতে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সময় উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিলঘুষি মারাসহ টেনেহিঁচড়ে তাঁর পাঞ্জাবি ছেঁড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরপরই থানা থেকে পুলিশ গিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউলের চাচাতো ভাই ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ বাদী হয়ে জুলফিকার আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে সভাপতি পদ নিয়ে কিছুদিন ধরে উপজেলা কমিটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফের নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষই এখন মুখোমুখি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে সভাপতির পদ নিয়ে কিছুদিন ধরে উপজেলা কমিটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউলের নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষই এখন মুখোমুখি। জাতীয় শোক দিবসে আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের অংশ আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে হামলার শিকার হন। সেদিন আনোয়ারের অনুসারী ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। হামলাকারীরা রেজাউলের লোক এমন দাবি আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন অংশের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে দলীয় নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন রেজাউল আশরাফ। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন আনোয়ারের আস্থাভাজন জুলফিকার আলী। দলীয় কোন্দল নিয়ে দুজনই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রেজাউল আশরাফের ওপর চড়াও হন জুলফিকার ।

কুন্দারহাট বাজারে বহু মানুষের উপস্থিতিতে চায়ের দোকানে বসে গল্পগুজব করছিলাম। আওয়ামী লীগ নেতা জুলফিকার আগ বাড়িয়ে আমার ওপর আক্রমণ করেন। তিনি টেনেহিঁচড়ে আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে আমাকে
রেজাউল আশরাফ, নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

রেজাউল আশরাফের দাবি, ‘কোনো কারণ ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে জুলফিকার আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। টেনেহিঁচড়ে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেন।’

একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
এর মধ্যে রেজাউল আশরাফকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বেলা তিনটার দিকে তাঁর সমর্থকেরা নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রেজাউল আশরাফ ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল চন্দ্র, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামিম শেখ ও আফজাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন চন্দ্র, উপজেলা যুবলীগের মাহমুদ আশরাফ, কৃষক লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সম্পাদক সাঈদ রায়হান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু সাঈদ, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত। তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সভাপতি কোনোভাবেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে অপদস্থ করতে পারেন না। বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
রাগেবুল আহসান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

অন্যদিকে জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের কর্মী–সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় রেজাউল আশরাফের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আঁতাত ও দলীয় নেতাদের সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ এনে তাঁকে অপসারণের দাবি করা হয়।

জানতে চাইলে জুলফিকার আলী প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদকের নেতৃত্বে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে যাওয়া নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান চায়ের দোকানে বসে ‘কটূক্তি’ এবং উপজেলার নেতাদের সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। কোনো মারধর বা পাঞ্জাবি ছেঁড়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে রেজাউল আশরাফ বলেন, ‘দলের নেতৃত্ব নিয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বা দল সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করার সাহস বা এখতিয়ার কারও নেই। স্পর্শকাতর অভিযোগ দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির পাঁয়তারা করছেন তাঁরা।’ তিনি বলেন, ‘কুন্দারহাট বাজারে বহু মানুষের উপস্থিতিতে চায়ের দোকানে বসে গল্পগুজব করছিলাম আমি। জুলফিকার আগ বাড়িয়ে আমার ওপর আক্রমণ করেন। তিনি টেনেহিঁচড়ে আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে আমাকে অপদস্থ করেন।’

নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুজনই দলীয় লোক। তাঁদের মধ্যে অপ্রীতিকর কিছু ঘটে থাকলে দুজনকে নিয়ে দলীয়ভাবে বসে বিষয়টি মিটমাট করে দেওয়া হবে।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত। তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সভাপতি কোনোভাবেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে অপদস্থ করতে পারেন না। বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবির প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় বিরোধের জেরেই আজ ওই ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।