নরসিংদী স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় যুবক তিন দিনের রিমান্ডে

তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার ইসমাইলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ দুপুরে রিমান্ড মঞ্জুরের পর নরসিংদীর আদালত চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদী রেলস্টেশনে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ইসমাইলের (৩৮) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মেহনাজ সিদ্দিকী তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভৈরব রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক হারুনুজ্জামান রুমেল বলেন, আদালতে আসামি ইসমাইলের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ড কার্যক্রম আজই শুরু হবে। এ ছাড়া বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে আদালতের নির্দেশে গত শনিবার দিবাগত রাত ১১টায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলাটি করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক ইমায়েদুল জাহেদী। মামলার এজাহারে এক নারীসহ দুজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও একজন নারী ও ১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন

মামলার আসামিরা হলেন নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামারা এলাকার মৃত বাদল মিয়ার ছেলে মো. ইসমাইল ও নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড় এলাকার ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী শিলা আক্তার। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ ও মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও দেখে তাঁদের আসামি করা হয়।

নরসিংদী রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনে আসেন ওই তরুণী ও দুই তরুণ। সকাল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তাঁরা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় স্টেশনে মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী পোশাক পরেছ তুমি?’ তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এর মধ্যে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত কয়েকজন ব্যক্তি।

আরও পড়ুন

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিও তাঁর পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে তাঁর পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনোরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী।

এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তাঁরাও দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাঁদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন

তরুণীকে হেনস্তার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকা থেকে ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরের দিন শনিবার বিকেলে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং এ ঘটনায় তদন্ত করে মামলা করার নির্দেশ দেন। ওই রাতেই ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন ইমায়েদুল জাহেদী।