নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা

নরসিংদীর মাধবদীতে বুধবার রাতে আওয়ামীলীগের সভা শেষে একপক্ষের হামলায় অপরপক্ষের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ একজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন। দুই পক্ষের লোকজন শুক্রবার সকালে মাধবদী থানায় এসে এই পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। আজ শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান।

এর আগে গত বুধবার রাত আটটার দিকে মাধবদী পৌরসভা মোড়ে আওয়ামী লীগের সভা শেষে বের হওয়ার সময় এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের দুজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন মাধবদী পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. জাকারিয়া (৩৯) এবং মাধবদীর নূরালাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যসচিব আবুল কালাম (৩০)। গুলিবিদ্ধ দুজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মাধবদী থানায় একটি মামলা করেছেন গুলিবিদ্ধ জাকারিয়ার বড় ভাই নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন। এ মামলায় মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধানকে প্রধান আসামি করে মোট ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন আবদুল আহাদ (২৫), মোজাম্মেল (৩৮), মাসুদ রানা ওরফে জুনিয়র মাসুদ (২৬), শাহিন মিয়া (২৮), আতাউর ভূঁইয়া (২৮), আকরাম হোসেন (২৮), সাকিব (২৪), নুর মোহাম্মদ (৩০), সেন্টু শীল (২৫) ও মনিরুজ্জামান(৪০)।

অপর মামলাটি করেছেন মেয়র মোশাররফ হোসেন পক্ষের পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মোজাম্মেল মিয়া। এ মামলায় গুলিবিদ্ধ জাকারিয়াসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি করা হয় জাকারিয়াকে। ওই মামলার এজাহারে মোজাম্মেল মিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো ও তাঁর এক আত্মীয়র গালে ছুরি দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, দলের আসন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে বুধবার বিকেলে মাধবদী শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নবগঠিত থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জি এম তালেব হোসেন ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ আলী।

সভা চলাকালে মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তাঁকে কেন এই সভায় আমন্ত্রণ করা হয়নি, তা নিয়ে তিনি হইচই করেন। একপর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পৌরসভা মোড়ে তিনি তাঁর পক্ষের লোকজন নিয়ে অবস্থান নেন। পরে এ হামলার ঘটনার ঘটে। হামলার সময় গুলিবিদ্ধ দুজনই মোশাররফ হোসেনের বিরোধীপক্ষের বলে পরিচিত।

মেয়র মোশাররফ হোসেনের পক্ষের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বাদী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে সভা শেষে নেতা–কর্মীরা ফিরে যাওয়ার সময় মাধবদী পৌরসভা মোড়ে পাঁচদোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আসামি শাহিন মিয়া তাঁকে গুলি করলে, তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিনি গাড়ি থেকে বের হয়ে কোনোরকম পালিয়ে বাঁচেন।

মো. আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, জাকারিয়া ও আবুল কালাম পৌরসভার মোড় দিয়ে যাওয়ার পথে মেয়রের নির্দেশে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় এবং মেয়র তাঁর পিস্তল দিয়ে জাকারিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েকটি গুলি চালান। এ সময় জাকারিয়ার ডান পায়ে গুলি লাগে। একই সময় মেয়রপক্ষের আবদুল আহাদ আবুল কালামকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তাঁর পায়ে গুলি লাগে।

প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেনের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি মাধবদী পৌরসভার আওয়ামী সমর্থিত মেয়র ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমাকে বাদ দিয়ে ওই সভা চলছিল। তাই আমি সেখানে গিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, কেন আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি? তারপরই আমি সেখান থেকে চলে আসি। আমি সেখানে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সভা শেষে বের হওয়ার পর জাকারিয়াই প্রথম আমাকে ও পৌরভবন লক্ষ্য করে গুলি করে। আমি অথবা আমার কোনো লোক সেখানে কোনো অস্ত্র প্রদর্শন করি নাই, গুলিও করে নাই।’

মাধবদী পৌরসভার মেয়র আরও বলেন, ‘আমার অস্ত্র দিয়েই নাকি গুলি করা হয়েছে, এমন অভিযোগ জানার পর আমি নিজেই পরীক্ষার জন্য আমার সব গুলিসহ অস্ত্র থানায় জমা দিয়ে এসেছি।’

জানতে চাইলে মাধবদী থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান জানান, উভয় পক্ষই বৃহস্পতিবার রাতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। আজ ভোরের দিকে দুটি অভিযোগই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।