নরসিংদীতে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সাংসদ পক্ষের নেতা-কর্মীরা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেনপ্রথম আলো

সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সাংসদ পক্ষের নেতা-কর্মীরা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখান থেকে আগামী সাত দিনের মধ্যে মামলার বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেপথ্যের চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়।

জাতীয় শোক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন মোহাম্মদ মোস্তাক আহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ১২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে আদেশ দেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুমকে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাংসদ ১৯ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের বীরপুর এলাকার সিএনজিস্ট্যান্ডে সমাবেশ করে সাংসদ নজরুল ইসলাম হিন্দুধর্মের লোকজনের উদ্দেশে উসকানিমূলক, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন।

এতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এক গণভোজ ও দোয়া মাহফিল হয়। এ জন্য আগের রাতে ওই কার্যালয়ের সামনে তিনটি গরু ও দুটি খাসি জবাই করা হয়। গণভোজে মামলার বাদীসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন ধর্মের লোকজন অংশ নেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের বীরপুর এলাকার সিএনজিস্ট্যান্ডে সমাবেশ করে সাংসদ নজরুল ইসলাম হিন্দুধর্মের লোকজনের উদ্দেশে উসকানিমূলক, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছেন।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নরসিংদী সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান সফর আলী ভূঁইয়া। মামলার অপর আসামি এস এম কাইয়ুমের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন প্রধান মানিক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, নরসিংদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. রিপন সরকার, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।

লিখিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর উপজেলার ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও নরসিংদী পৌরসভার ৮ জন কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ৪৬ জন নেতা–কর্মী।

এতে বলা হয়, গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপক সাহা ও বর্তমান কমিটির সদস্যসচিব সুব্রত কুমার দাস কতিপয় দলীয় নেতা–কর্মীর সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনের কষ্ট দূর করার জন্য বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে যেন অন্য ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত না করি। যদি করি তবে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।’ সাংসদের ওই বক্তব্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনের কষ্ট দূর হয়েছিল।

এতে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। কাল্পনিক অভিযোগে তাঁকে আদালত পর্যন্ত যাঁরা নিয়ে গেছেন তাঁরা দল ও সরকারকে বিব্রত করেছেন। এ ছাড়া ওই মামলায় তাঁর ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করা হয়েছে; যা আদালতের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মামলার বিষয়টি চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন এবং দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও নরসিংদীকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা। মামলার মদদদাতারাই প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্বন্দ্বে মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অন্য পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়া ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামরুজ্জামান। দুই পক্ষই নিজেদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদা আয়োজনে জাতীয় অনুষ্ঠান ও দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। দলীয় বিভাজনের কারণে জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ক্রমে দুর্বল হচ্ছে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী বলেন, ‘মামলাসংক্রান্ত আদালতের কাগজপত্র হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।’

সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিষয়টিকে নিয়ে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দল ও সরকারকে বিব্রত করতে না পারে এবং কারও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।