নলকূপের পানিতে বিষ, সুপেয় পানির সংকট

তামাই গ্রামের নতুনপাড়ায় সুপেয় পানির সংকট বেশি। তাঁত কারখানার বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশে দূষণ ঘটাচ্ছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

নলকূপ থেকে বের হয় ফেনামিশ্রিত পানি। খুব প্রয়োজন না হলে তা কোনো কাজে ব্যবহার করা হয় না। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির তামাই গ্রামে
প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের বাসিন্দারা সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। গ্রামের বেশির ভাগ নলকূপ থেকে সম্প্রতি ফেনামিশ্রিত পানি বের হচ্ছে, যা খাওয়া ও রান্নায় ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় অনেকেই সরবরাহের পানি ব্যবহার করছে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে এই পানিই ব্যবহার করছে।

গ্রামটিতে সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে নতুনপাড়ায়। গ্রামজুড়ে এক হাজারের বেশি তাঁত কারখানা থাকায় এগুলোর বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে এমন সমস্যার তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সম্প্রতি গ্রামটিতে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। গ্রামবাসীর ভাষ্য, গ্রামে দুই হাজারের বেশি পরিবার আছে। বেশির ভাগ বাড়িতেই আছে গভীর নলকূপ। কিন্তু এসব নলকূপ থেকে ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি বের হওয়ায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সচ্ছল পরিবারগুলো বোতলজাত পানি ব্যবহার করছে। গ্রামের বেশ কয়েকটি নলকূপ চেপে ফেনামিশ্রিত পানি বের হতে দেখা যায়।

গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পানির সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তৃষ্ণার সময় শান্তিতে এক গ্লাস পানি পান করা যায় না। এই পানিতে গোসল করলেও শরীর গন্ধ হয়ে যায়।

অপর বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, তিনি একটি কারখানার কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, কেমিক্যালমিশ্রিত বর্জ্য বিদ্যুচ্চালিত পাম্পের সাহায্যে মাটির গভীরে ফেলা হয়। সেই কেমিক্যালই ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশে দূষণ ঘটাচ্ছে বলে তাঁর ধারণা। এই পানি খেলে পেট ব্যথা করে।

উপজেলার মুন্সী ব্রাদার্স প্রসেস কারখানার স্বত্বাধিকারী শওকত মুন্সি বলেন, তাঁরা মাটির গভীরে বর্জ্য ফেলেন না। নিজস্ব খালে ফেলেন। শওকত মুন্সি বলেন, তাঁরা আসলে এভাবে বর্জ্য ফেলতে চান না। যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এমন করতে হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, কারখানার কেমিক্যালমিশ্রিত বর্জ্য যথাযথভাবে শোধনের ব্যবস্থা না থাকায় তা মাটি ও পানির দূষণ ঘটাচ্ছে। যথাযথ বর্জ্যশোধন ব্যবস্থা না থাকার কথা স্বীকার করেছেন কয়েকটি কারখানার মালিকও।

বেলকুচি প্রসেস মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শুধু এই উপজেলাতেই সুতা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা আছে ১৩টি। এর বাইরেও আছে, তবে সেগুলো সমিতিভুক্ত নয়। জেলায় সুতা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ১৫০টি, ২ হাজারের মতো ডাইং ও ফিরোজা রঙের কারখানা আছে ২০টি।

বেলকুচি প্রসেস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, এই অঞ্চলে একটি বর্জ্যশোধন প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তাবনা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারকে দেওয়া হয়েছে। একটি প্ল্যান্ট হলেই সমস্যার সমাধান হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।