নলছিটিতে বিশেষ ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ–চেষ্টার অভিযোগ

ঝালকাঠি জেলার মানচিত্র

ঝালকাঠির নলছিটির নাচনমহল ইউনিয়নের জেলেদের ১২২ বস্তা চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ–চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে জাল টিপসই দিয়ে হাজিরা (মাস্টাররোল) তৈরি করে চাল বিতরণ দেখিয়ে বিক্রি করার সত্যতা পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনা ধরা পড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে তড়িঘড়ি করে আজ বৃহস্পতিবার এ চাল বিতরণ করা হয়।

চাল বিতরণে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় ইউপি সচিব ওবায়দুর রহমানকে শোকজ করেছেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা শিকদার। জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে ‘ভুল হয়েছে’ বলে জানান নাচনমহল ইউনিয়নের সচিব।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে জাল টিপসই দিয়ে হাজিরা (মাস্টাররোল) তৈরি করে চাল বিতরণ দেখিয়ে বিক্রি করার সত্যতা পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় ও উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখায় জেলেদের জন্য বিশেষ ভিজিএফ চাল বরাদ্দ করে সরকার। নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ৬৫ জন জেলেকে ২ দফায় ৮০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। নলছিটি খাদ্যগুদাম থেকে নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলামের নামে ২১ মার্চ ১২২ বস্তা চাল ছাড়িয়ে নেন ইউপি সচিব ওবায়দুর রহমান। চাল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে রাখা হয়। ২২ মার্চ চাল বিতরণের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে চাল বিতরণ করা হয়নি। এমনকি তালিকাভুক্ত জেলেরাও জানেন না, তাঁদের নামে চাল বরাদ্দ এসেছে। এ চাল না দিয়ে জেলেদের জাল টিপসই দিয়ে একটি হাজিরা (মাস্টাররোল) তৈরি করা হয়। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ইউপি সচিব এ কাজ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাল টিপসই দেওয়া মাস্টাররোল জমা দেওয়া হয় পিআইও দপ্তরে। চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে পিআইও বিজন কুমার খরাতীকে জানান ইউপি সচিব। পিআইও বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করেন।

স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানতে পারেন, বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের জন্য নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামঘরে রাখা আছে। জেলেদের মাধ্যমে খবর পেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এক মাঠ কর্মকর্তা তদন্ত করে সত্যতা পান। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন আজ সকালে গুদামে গিয়ে চাল দেখতে পান। বিষয়টি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব নানা টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা নিজেদের ভুল স্বীকার করেন। জাল টিপসইয়ের বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনও ইউপি সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। কেন তাঁর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এদিকে ইউএনওর চাপের মুখে আজই চাল বিতরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব। দুপুরের পরে তাঁরা নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ওই চাল বিতরণ করেন।

চাল বিতরণ হয়েছে বলে আমাদের কাছে একটি মাস্টাররোল জমা দেন ইউপি সচিব। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা চাল জেলেদের দেননি। বিষয়টি এত দিন ধরা পড়েনি। আজ জানার পরে আমি চাল বিতরণের নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় ইউপি সচিবকে শোকজ করা হয়েছে।
রুম্পা সিকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), নলছিটি

নাচনমহল ইউপি সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘চাল গুদামে আনার পরে পিআউও আমাদের চাল বিতরণ করে দ্রুত মাস্টাররোল দিতে বলেন। তাই তাড়াহুড়ো করে একটি মাস্টাররোল জমা দিয়েছি। আমরা চাল দেওয়ার জন্য গুদামে রেখেছিলাম, আত্মসাতের জন্য নয়। তারপরও এটা আমাদের ভুল হয়েছে।’

নাচনমহল ইউপি চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চাল বিতরণ সঠিক নিয়মেই হয়েছে। নির্ধারিত তারিখে দিতে পারিনি, তবে আজ (বৃহস্পতিবার) দিয়েছি। গরিবের চাল আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না।’

নলছিটি ইউএনও রুম্পা সিকদার বলেন, ‘চাল বিতরণ হয়েছে বলে আমাদের কাছে একটি মাস্টাররোল জমা দেন ইউপি সচিব। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা চাল জেলেদের দেননি। বিষয়টি এত দিন ধরা পড়েনি। আজ জানার পরে আমি চাল বিতরণের নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় ইউপি সচিবকে শোকজ করা হয়েছে। কেন চাল বিতরণে বিলম্ব হয়েছে, তার সঠিক জবাব না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’