নলছিটিতে যুবলীগ কর্মীকে কোপাল প্রতিপক্ষ

ঝালকাঠির নলছিটিতে দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আসাদুজ্জামান খান ওরফে পলাশ (৩৫) নামের যুবলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে প্রতিপক্ষ। তাঁর একটি হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার আমতলী গ্রামের সরকার বাড়ির মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রাতে এ ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় যুবলীগের ওই কর্মীকে উদ্ধার করে প্রথমে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাতেই ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়।

আহত আসাদুজ্জামান মোল্লারহাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এসকেন্দার আলী খানের ছেলে। তিনি মোল্লারহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার আত্মীয় এবং মোল্লারহাট ইউনিয়ন যুবলীগের একজন কর্মী।

আসাদুজ্জামান মোল্লারহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার আত্মীয় হওয়ায় রোববার তাঁকে কুপিয়েছেন প্রতিপক্ষের লোকজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মোল্লারহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও যুগ্ম সম্পাদক ইউপি সদস্য আক্কাস আলী সরদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এর জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষ হয়। দলীয় কর্মসূচিও তাঁরা আলাদাভাবে পালন করেন। ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি মোল্লারহাট চৌরাঙ্গী বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাকে কুপিয়ে জখম করেন আক্কাস আলী সরদারের লোকজন। এ ঘটনার পর ২০২০ সালের ৯ জুন রাতে আক্কাস আলী সরদারকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন সোহেল রানার লোকজন। এ পাল্টাপাল্টি বিরোধ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলাও রয়েছে। আসাদুজ্জামান সোহেল রানার আত্মীয় হওয়ায় রোববার তাঁকে কুপিয়েছেন প্রতিপক্ষের লোকজন।

মোল্লারহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, তিনি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মোল্লারহাট ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। তাঁর বড় বোন হ্যাপী আক্তারের মৃত্যু হলে রোববার রাতে গ্রামের বাড়ির উঠানে জানাজা হয়। এতে অংশ নেন তাঁর বাবার চাচাতো ভাই আসাদুজ্জামান খান পলাশ। জানাজা শেষে মোটরসাইকেলে করে নলছিটি শহরের বাইপাস সড়কের বাসায় ফেরার পথে আমতলী গ্রামের সরকার বাড়ির মোড়ে এলে প্রতিপক্ষ আক্কাস আলী সরদারের নেতৃত্বে ১০-১২ জন হামলা চালান। তাঁরা কুপিয়ে পলাশের বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে তাঁকে জখম করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার করে রাতেই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাতে কে বা কারা পলাশকে মেরেছে, তা আমাদের জানা নেই। আমাকে কুপিয়ে তারা হত্যা করতে চেয়েছিল। আমি নিজেই তাই অসুস্থ। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
আক্কাস আলী সরদার, ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) আসাদুজ্জামান খানের অস্ত্রপচার করছিলেন চিকিৎসক এম আলী। অর্থোপেডিক এই বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে সোহেল রানা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আসাদুজ্জামানের বাম হাতের কবজিটি চামড়ার সঙ্গে ঝুলে ছিল। সেটি অস্ত্রোপচার করে পুনঃস্থাপন করা হবে।

এদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা আক্কাস আলী সরদার বলেন, ‘রাতে কে বা কারা পলাশকে মেরেছে, তা আমাদের জানা নেই। আমাকে কুপিয়ে তারা হত্যা করতে চেয়েছিল। আমি নিজেই তাই অসুস্থ। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য মোল্লারহাট বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।