এক অধ্যক্ষের যত কাণ্ড...

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগে শিক্ষকেরা বলেছেন, মো. ময়মুর সুলতান নামে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা প্রভাষকের সই জাল করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনার টাকা তোলা হয়েছে।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চাঁদপুর বিএম কলেজে ২০ বছর ধরে চাকরি করছেন এমন শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়নি। অথচ ভুয়া তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ‘বিতর্কিত’ অধ্যক্ষ। নাটোরের জেলা প্রশাসকের কাছে এমন লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর বিএম কলেজের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক লুৎফর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ ও ইংরেজির প্রভাষক আবদুস সবুরকে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত প্রণোদনার (নন-এমপিও শিক্ষক) টাকা দেওয়া হয়নি। এমনকি কলেজের অধ্যক্ষ তালিকায় তাঁদের নামও পাঠাননি। তাঁরা ২০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করে আসছেন। অথচ ভুয়া তালিকা তৈরি করে অধ্যক্ষ অন্তত ১০ জনের প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অধ্যক্ষের তালিকায় থাকা শিক্ষকেরা অনেকে কখনোই এই প্রতিষ্ঠানে এক দিনের জন্যও আসেননি। কোনো শিক্ষক-কর্মচারী তাঁদের চেনেনও না।

অভিযোগে বলা হয়, মো. ময়মুর সুলতান নামে একজন প্রভাষক দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছেন। তাঁর স্বাক্ষর জাল করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

প্রভাষক লুৎফর রহমান জানান, কলেজটির অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেনের এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সব ডিগ্রি তৃতীয় শ্রেণির। সরকারি বিধি অনুযায়ী তাঁর শিক্ষকতা করার যোগ্যতা নেই। এ কারণে ২০১৬ সালে কলেজটির সভাপতি বাগাতিপাড়ার ইউএনও বেতন বিলে স্বাক্ষর করা বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে তাঁকে অপসারণ করে লুৎফর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। ২০১৮ সালে মকবুল হোসেনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত তাঁকে ছয় মাসের জন্য অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেন। এ কারণে তিনি তাঁর প্রতিপক্ষদের প্রণোদনার টাকা থেকে বঞ্চিত করেছেন।

এদিকে অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কলেজে নিয়মিত না আসায় প্রভাষক লুৎফর রহমান, আবুল কালাম আজাদ ও আবদুস সবুরের নাম তালিকায় দেওয়া হয়নি। আর এমএলএসএস আছের উদ্দিনের বিষয়ে বলেন, ‘তিনি আমার প্রতিবেশী। তাঁকে ডেকে টাকা দিয়ে দেব।’


এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।