নাটোরে ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে ঢিমেতালে, নমুনা সংগ্রহ বাড়েনি

নাটোরে চলমান লকডাউনে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল কম থাকলেও ভেতরের অলিগলিতে চিত্র পুরো উল্টো। শনিবার সকাল ১০টার দিকে নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকায় শহরের প্রধান সড়কে তোলা ছবিপ্রথম আলো

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নাটোর জেলায় জারি করা ‘কঠোর লকডাউন’ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। যানবাহন চলাচল করছে, পুলিশ ও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মানুষ চলাচল করছে ইচ্ছেমতো। এদিকে সংক্রমণের হার বাড়লেও জেলায় নমুনা সংগ্রহ বাড়াতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ, প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় ৯ জুন সকাল ৬টা থেকে ১৫ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। এতে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হলেও জেলার অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাসগুলো হরিশপুর বাইপাস ও দিঘাপতিয়া চেকপোস্ট থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করছে। এসব জায়গা থেকে যাত্রীরা ইজিবাইক ও রিকশায় করে চলাচল করছেন। শহরের প্রধান সড়কটি শুধু পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে প্রধান সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী ভেতরের সব রাস্তায় রিকশা ও ইজিবাইক অবাধে চলাচল করছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও পরে যানবাহন চলাচলে তেমন একটা বাধা থাকছে না।

গণবিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় দফায় দোকান, শপিংমল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। শহরের প্রধান সড়কের দুই ধারে এই বিধিনিষেধ মানা হলেও কাঁচাবাজার–সংলগ্ন ও অলিগলির দোকানপাট খোলা থাকছে। বিজ্ঞপ্তিতে গণজমায়েত নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে শহরের মোড়ে মোড়ে আড্ডা বন্ধ হয়নি। জরুরি প্রয়োজনে মাস্ক পরে বাইরে চলাচলে অনুমতি থাকলেও বাইরে আসা মানুষ নানা অজুহাতে মুখের সঠিকভাবে মাস্ক না পরে চলাফেরা করছেন।

সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও পরে যানবাহন চলাচলে তেমন একটা বাধা থাকছে না।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, শহরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসন ও পুলিশ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত চার দিনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা শতাধিক ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগে জরিমানা করেছেন। এ ছাড়া শহরের ব্যস্ততম স্থানসমূহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। বিধিনিষেধের ফাঁকফোকর ডিঙিয়ে চলাচল সম্পর্কে বলেন, কৌশলে কেউ হয়তো প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলাচল করছেন। কিন্তু এতে তাঁর নিজেরই ক্ষতি তো সবার আগে হবে। করোনাকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করা না গেলে সংক্রমণ কমবে না, লকডাউনও শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এ জন্য জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হতে হবে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও নমুনা সংগ্রহ তেমন একটা বাড়ানো যায়নি। আরটি-পিসিআর মেশিন না থাকা ও জনবলসংকটের কারণে ব্যাপকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার মাত্র একটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ নমুনা সংগ্রহ বুথ বাড়ানো তো হয়ইনি, বরং শহরের কানাইখালিতে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের বুথটি চার দিন ধরে বন্ধ আছে।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি কর্মদিবসে আগের চেয়ে কিছু বেশি নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। তবে তা ব্যাপক আকারে হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট ও জিন এক্সপার্ট মেশিনে যতটুকু করা যায়, তা অব্যাহত আছে। সদর হাসপাতালে রোগী বেড়ে যাওয়ায় করোনা ওয়ার্ড ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে।