নাটোরে লকডাউনের মধ্যেও করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে

করোনাভাইরাস
ফাইল ছবি

নাটোরে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শহরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক অনেক বেশি। সংক্রমণ কমানোর জন্য গত বুধবার থেকে সাত দিনের লকডাউন শুরু হলেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। নানা অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করছে। এসব কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। শনাক্ত হওয়া ৮২ জনের ৫৯ জনই নাটোর শহরের বাসিন্দা। এদিকে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার দুজন করে এবং আজ শুক্রবার রাতে একজন করোনায় মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে নাটোর সদর হাসপাতালে দুজন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মারা যান।

নমুনা সংগ্রহে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগ কম

সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লেও অধিক হারে নমুনা সংগ্রহে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং নাটোর শহরে লকডাউন শুরুর দিন বুধবার থেকে শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে এক দিন আগে স্থাপন করা ভ্রাম্যমাণ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও এখনো ভ্রাম্যমাণ বুথ চালু করা হয়নি।

নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। করোনা রোগীদের নির্ধারিত ৩১ শয্যার রেড জোন অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বাকি রোগীদের ইয়েলো জোনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের হাসপাতালের করিডরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। একই সঙ্গে বহির্বিভাগের কয়েক চিকিৎসকের চেম্বার নতুন ভবনে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নতুন ভবন এখনো রোগী দেখার উপযোগী করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথে পানি জমে আছে। প্রধান দরজা লাগানো হয়নি। টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় চিকিৎসাব্যবস্থার ব্যাপারে বলেন, গত বছর ঢাকায় করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় নাটোরের একজন চিকিৎসক, দুজন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও দুজন নার্সকে সেখানকার বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়। নাটোরের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের নাটোরে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। ফলে টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে নাটোরে ল্যাবরেটরি পুরোপুরি চালু রাখা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সদর হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসকসহ ছয়জন সংক্রমিত হয়েছেন। এতে জনবলসংকট আরও বেড়েছে।

সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
কাজী মিজানুর রহমান, সিভিল সার্জন, নাটোর

জেলার সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, নাটোরে করোনা সংক্রমণের হার কিছুতেই কমছে না। এর মূল কারণ এখানকার লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মানুষ নানা অজুহাতে লকডাউনের মধ্যেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। গ্রামেগঞ্জে তো করোনা নিয়ে মানুষ চিন্তা করছে না। তিনি বলেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।