নাটোরে সাংসদ শফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আজ দুপুরে পুলিশ পাহারায় নাটোর শহরের সাহারা প্লাজার মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবগঠিত কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ছবি: প্রথম আলো

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নাটোর–২ আসনের (সদর ও নলডাঙ্গা) সাংসদ শফিকুল ইসলামসহ নাটোর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নবগঠিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা। আজ রোববার দুপুরে শহরের একটি রেস্তোরাঁর মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নবগঠিত জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো.শফিউল আযম। এ সময় তাঁরা বলেন, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে ২০ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

সাংসদ শফিকুল ইসলামের বাবা মরহুম হাসান আলী সরদার চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজিত সরকারের লেখা নাটোর জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের ৬০০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত রাজাকারের তালিকায় ২১ নম্বরে হাসান আলী সরদারের নাম লেখা রয়েছে।
মো.শফিউল আযম, সাধারণ সম্পাদক, নাটোর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ

এরপর নাটোরের চারজন সাংসদসহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। অথচ গতকাল শনিবার দুপুরে নাটোর-২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলামের ইন্ধনে বিলুপ্ত কমিটির হাতে গোনা কয়েকজন নেতা নতুন কমিটির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে নানা অপপ্রচার চালান।

তাঁরা অভিযোগ করে আরও বলেন, বিলুপ্ত কমিটির ওই সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদকে নিয়েও মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির সভাপতিকে রাজাকারের সন্তান ও সাধারণ সম্পাদককে মাদকসম্রাটের সহোদর আখ্যায়িত করে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে সাংসদ শফিকুল ইসলামের ছবিও ব্যবহার করা হয়।

নতুন সাধারণ সম্পাদক মো.শফিউল আযম তাঁর বক্তব্যে বলেন, সাংসদ শফিকুল ইসলামের বাবা মরহুম হাসান আলী সরদার চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজিত সরকারের লেখা নাটোর জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের ৬০০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত রাজাকারের তালিকায় ২১ নম্বরে হাসান আলী সরদারের নাম লেখা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বইটি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

যিনি বইটি লিখেছেন, তাঁকে নাটোরের কোনো মুক্তিযোদ্ধা চেনেন না। এই প্রকাশনার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নাটোরের সুসংগঠিত রাজনীতি ধ্বংস করছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। এ ব্যাপারে আমি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাব।
শফিকুল ইসলাম, নাটোর–২ আসনের সংসদ সদস্য

এ সময় তিনি আরও বলেন, সাংসদ শফিকুল প্রভাব খাটিয়ে দলের বিভিন্ন কমিটিতে তাঁর পরিবারের ১১ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাঁর পরিবারের কাছে নাটোরের আওয়ামী রাজনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নবগঠিত কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তোলা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাংসদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যাতে আমি মনোনয়ন না পাই, সে জন্য আহাদ আলী সরকার এবং শরিফুল ইসলাম রমজান অর্থের বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে নাটোর জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ নামের বইটি ছাপিয়েছেন। যিনি বইটি লিখেছেন, তাঁকে নাটোরের কোনো মুক্তিযোদ্ধা চেনেন না। এই প্রকাশনার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নাটোরের সুসংগঠিত রাজনীতি ধ্বংস করছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। এ ব্যাপারে আমি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাব।’

রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, সংবাদ সম্মেলন করতে না দেওয়ার ব্যাপারে ওপরের একটি মহলের চাপ ছিল। তবে নিরুপায় হয়ে তিনি মিলনায়তনটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

সংবাদ সম্মেলনে নাটোর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির নেতারা ছাড়াও উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা এবং জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সকাল থেকেই সংবাদ সম্মেলন নিয়েও নানা নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার রাতে সাংবাদিকদের জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এ খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই বিলুপ্ত কমিটি একই স্থানে অন্য একটি সভা আহ্বান করে। এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাদের অনুরোধে শহরের সাহারা চায়নিজ রেস্টুরেন্টের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে ওই রেস্তোরাঁর সামনে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, সংবাদ সম্মেলন করতে না দেওয়ার ব্যাপারে ওপরের একটি মহলের চাপ ছিল। তবে নিরুপায় হয়ে তিনি মিলনায়তনটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।