নাটোরের সাংসদ শহিদুল বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করেছেন, নৌকা হেরেছে

নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাত্র পাঁচটিতে জয়ী হয়েছেন। নৌকার এমন বিপর্যয়ের কারণ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমানের সঙ্গে। তিনি ওই উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের তিনটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছেন। এ ফলাফল আপনি কীভাবে দেখছেন?

সেকেন্দার রহমান: ইউপি নির্বাচনের এই ফলাফলকে আমি ভরাডুবি মনে করি না। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জন্য এটা বিপর্যয়, দুঃখজনকও বটে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নৌকার বিপর্যয়ের কারণ কী?

সেকেন্দার রহমান: বিপর্যয়ের মূল কারণ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত নাটোর-১ (বাগাতিপাড়া-লালপুর) আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলাম। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর বরাবরই প্রতিটি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। গত উপজেলা নির্বাচনে দল আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে তাঁর ভাইকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেছিলেন। প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন। এবার ইউপি নির্বাচনে তাঁর সমর্থকেরা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। সাংসদ তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। ফলে নৌকা হেরেছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ভোট তো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাহলে কি আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা দলকে গুরুত্ব না দিয়ে সাংসদকে গুরুত্ব দিয়েছেন?

সেকেন্দার রহমান: এমনিতেই একজন সাংসদ এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী লোক। আর ক্ষমতাসীন হলে তো প্রভাব আরও বেড়ে যায়। তাঁর হাতে সরকারের অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকে। তিনি সেগুলো নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজে লাগিয়েছেন। এটাও ভোটের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: উপজেলার পাঁচটি ইউপির দুটিতে বিএনপি–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সেখানে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিলেন। তাঁরা তো বিজয়ী হতে পারেননি। এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

সেকেন্দার রহমান: গত উপজেলা নির্বাচনে সাংসদ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে গোপনে হাত মিলিয়ে তাঁর ভাইকে নৌকার বিপক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। এবার তিনি তাঁদের প্রতিদান হিসেবে দুটি ইউনিয়ন ছেড়ে দিয়েছেন। তাই তাঁরা বিজয়ী হতে পেরেছেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সব ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন যথাযথ ছিল বলে মনে করেন কি?

সেকেন্দার রহমান: কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বাগাতিপাড়ার চারটি ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন উপযুক্ত ব্যক্তিকেই দিয়েছিলেন। শুধু পাকা ইউনিয়নে উপযুক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হয়নি। আমাদের পাঠানো তালিকায় তাঁর নাম ৩ নম্বরে ছিল। তাঁর নামের পাশে তাঁর মাদক সম্পৃক্ততার কথাও উল্লেখ ছিল। তবুও দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিল। তিনি হেরে গেছেন। তিনি জামানত হারিয়েছেন। সেখানে সাংসদ–সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাংসদের ভাইয়ের জামাতা। তিনি শুধু হারেননি, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেননি। এখানে সাংসদের ভূমিকার কথা কী বলবেন?

সেকেন্দার রহমান: ফাগুয়াড়দিয়াড় সাংসদের নিজ ইউনিয়ন। নৌকার প্রার্থী তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অথচ তাঁর বিপরীতে সাংসদের দুই ভাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। চাপে পড়ে তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে সেখানেও নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানো হয়। ফলে ওই ইউনিয়নে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী জয় পেয়ে যান।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ইউপি নির্বাচন নিয়ে সাংসদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সমন্বয় হয়েছিল?

সেকেন্দার রহমান: গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাংসদের সম্পর্কের অবনতি হয়। বর্তমানে যোগাযোগ নাই বললেই চলে। তবুও নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তিনি তাঁদের কারও কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ভবিষ্যতে নৌকার ভরাডুবি ঠেকাতে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

সেকেন্দার রহমান: বাগাতিপাড়ায় নৌকার ভরাডুবি ঠেকাতে হলে যথাযথ মনোনয়নের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।