নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে কুলিয়ারচরে বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী নুরুল মিল্লাত সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেন
প্রথম আলো

ভোট শুরুর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির প্রার্থী নুরুল মিল্লাত। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরের বেতিয়াকান্দি এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, মারধর ও প্রার্থীর সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ করেন।

নুরুল মিল্লাত অভিযোগ করেন, ‘ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে নির্বাচনী পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে শুরু করে। আজ ভোট শুরুর প্রথম ভাগ থেকেই ভোট জালিয়াতির চিত্র প্রকাশ পায়। শুরুতে নৌকার প্রার্থীর লোকজনের টার্গেট ছিল ধানের শীষের এজেন্টের দিকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার প্রায় সব এজেন্টদের একে একে বের করে দেওয়া হয়। কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে রাসেল মিয়া নামের আমার এক এজেন্টকে মারধর করা হয়। একই কেন্দ্রে কুলিয়ারচর থানার একজন এসআই আমাকে অপমান করেছেন। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের দুই এজেন্টকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। ইভিএমে ভোট নিয়েও জালিয়াতি করা হয়েছে।’

এই প্রার্থী অভিযোগ করেন, ‘প্রথমত, কুলিয়ারচর অগ্রসর পৌরসভা না হলেও ইভিএম দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সময়মতো প্রচারণা চালানো হয়নি। আর আজ ভোটের দিন আগে মেয়রকে ভোট দিতে হয়েছে প্রকাশ্যে। পরে কাউন্সিলদের ভোট দিতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুদিন আগে আওয়ামী লীগের ইশারায় থানায় মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভীতি ছড়াতে মামলার আসামি বিএনপির পৌর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাফিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অবস্থায় ভোটে আস্থা ধরে রাখা যায়নি। সেই কারণেই বর্জন ছাড়া আর কোনো গতি ছিল না।’

জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম অভিযোগ করেন, এই সরকার অনেক আগ থেকে নির্বাচনী সংস্কৃতির বারোটা বাজিয়ে রেখেছে। ভোট বলতে কিছু নেই। সবই নষ্ট করে ফেলেছে।

ভোট বর্জনের কারণ জেনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা বলেন, ‘বর্জন দুঃখজনক। বর্জন করার মতো কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ছাড়া কেন বিএনপি ভোট থেকে সরে গেল ভাবতে হবে।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘সকালে ডিগ্রি কলেজের কেন্দ্রের বাইরে বরং বিএনপির সমর্থকদের হামলায় আমাদের কয়েকজন কর্মী আহত হন।’

কুলিয়ারচর পৌরসভার ভোট হচ্ছে ইভিএম প্রক্রিয়ায়। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন দুজন। নৌকা প্রতীকের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন সৈয়দ হাসান সারোয়ার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আর ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নুরুল মিল্লাত।

এদিকে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটের দীর্ঘ সারি। ৩০০ শতাধিক নারী ভোট দেওয়ার জন্য সারিতে অপেক্ষা করছিলেন। পুরুষ সারিও ছিল বেশ লম্বা। কেন্দ্রটিতে মোট ভোট ২ হাজার ৪০০। এর মধ্যে পৌনে ১০টায় ৪ নম্বর বুথে গিয়ে জানা যায়, তখন পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৪৪ জন। ওই বুথে ভোট দেওয়ার ভোটার ৩৯০ জন।

সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফখরু উদ্দিন আকন্দ বলেন, ভোট একটু ধীরগতির হলেও ভোটারদের আগ্রহ বেশ আশা–জাগানিয়া।

কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে গিয়েও ভোটার উপস্থিতির একই চিত্র দেখা যায়। কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসার সঙ্গে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও ভোট নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার রেজওয়ান দিপুর সঙ্গে কথা হয় কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে। তিনি বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করেন।