নান্দাইলে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন মা

প্রতীকী ছবি

সুদের টাকা পরিশোধ না করায় বাড়ির সামনে থেকে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় সুদ ব্যবসায়ী। চিৎকার–চেঁচামেচি শুনে ওই ব্যক্তির মা ছুটে এসে তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় ধাক্কা লেগে পাকা সড়কে পড়ে গিয়ে মা আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পূর্ব সৈয়দগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত মায়ের নাম আম্বিয়া খাতুন (৬৫)। তিনি নান্দাইল উপজেলার পূর্ব সৈয়দগাঁও গ্রামের আশরাফ আলীর স্ত্রী। খবর পেয়ে পুলিশ বুধবার রাতেই ওই নারীর লাশ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

আমি চামটা গ্রামের মো. শাহজাহানের কাছ থেকে সুদে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিই। এ জন্য আমাকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা সুদ দিতে হতো।
মুর্শেদ আলী, নিহত আম্বিয়া খাতুনের ছেলে

আম্বিয়া খাতুনের ছেলে মুর্শেদ আলী বলেন, ‘আমি চামটা গ্রামের মো. শাহজাহানের কাছ থেকে সুদে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিই। এ জন্য আমাকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা সুদ দিতে হতো। সুদ হিসেবে আমি গত দুই মাসে অনেক টাকা শাহজাহানকে দিয়েছেন।’

মুর্শেদ আলী অভিযোগ করেন, বুধবার সন্ধ্যার সাতটার দিকে তিনি বাড়ির সামনে আবদুল কাইয়ুমের দোকানে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন। এ সময় শাহজাহানের লোকজন তাঁকে দোকান থেকে ডেকে সড়কে নিয়ে সুদে-আসলে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন ফোন করে শাহজাহানকেও সেখানে ডেকে আনা হয়।

একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হলে শাহজাহান ও তাঁর লোকজন একটি ইজিবাইকে তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। তখন তাঁর চিৎকার শুনে মা আম্বিয়া খাতুন এসে শাহজাহান ও তাঁর লোকজনকে বাধা দেন।

মুর্শেদ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর মা আম্বিয়া যখন তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন শাহজাহানের লোকজন তাঁর মাকে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মেরে সড়কে ফেলে দেন। তাঁর মা নিস্তেজ হয়ে পড়লে শাহজাহানের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে চলে গিয়ে চামটা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন।

মুর্শেদের আরেক ভাই বাবুল মিয়া বলেন, মাথায় পানি ঢালার পরও মায়ের চেতনা ফেরেনি। তারপর তাঁরা চার ভাই মিলে একটি ইজিবাইকে মাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন। শাহজাহানের লোকজন চামটা বাসস্ট্যান্ডে ইজিবাইক থামিয়ে চার ভাইকে মারধর শুরু করেন। পরে লোকজনের সহায়তায় রাত নয়টার দিকে মাকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, তাঁর মা মারা গেছেন।

সুদের টাকা আদায় করার জন্য মুর্শেদকে তুলে আনার চেষ্টা করা এবং তাঁর মা আম্বিয়া খাতুনকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য সুদ ব্যবসায়ী শাহজাহানের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।

সুদের টাকা আদায় করার জন্য মুর্শেদকে তুলে আনার চেষ্টা করা এবং তাঁর মা আম্বিয়া খাতুনকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার সুদ ব্যবসায়ী শাহজাহানের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, সুরতহাল করার সময় আম্বিয়া খাতুনের শরীরে জখমের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে আম্বিয়ার মৃত্যু নিয়ে তাঁর ছেলেদের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আম্বিয়া খাতুনের লাশ দাফনের পর তাঁর ছেলেরা এ বিষয়ে মামলা করবেন।