নারায়ণগঞ্জে চার শ্রমিককে হত্যার দায়ে দুজনের ফাঁসি, ৯ জনের যাবজ্জীবন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাল্কহেডের চার শ্রমিক হত্যা মামলায় দুইজনকে ফাঁসি ও ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুরে এই রায় দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাল্কহেডে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে চারজনকে হত্যা করার দায়ে ২ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যাবজ্জীন পাওয়া ব্যক্তিদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও তা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) বেগম সাবিনা ইয়াসমিন রোববার দুপুরে এই রায় দেন। এ ছাড়া বাল্কহেডের শ্রমিকদের হত্যা করে বাল্ডহেডে ডাকাতি করার দায়ে এ মামলার ১১ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ মামলার আরেক আসামি ইব্রাহিম হোসেন মারা যাওয়ায় তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন তাইজুল ইসলাম ওরফে তাইজুল ফিটার ও মহিউদ্দিন ওরফে মহি ফিটার। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন চাঁন মিয়া, দুলাল মিয়া, মজিবর, আবদুল মান্নান, মো. আরিফ, আবদুল জলিল, সাইফুল ইসলাম, দুলাল হোসেন ও শফিকুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে আবদুল জলিল, সাইফুল ইসলাম, দুলাল হোসেন ও শফিকুল ইসলাম পলাতক।

বাল্কহেডের চার শ্রমিককে হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে বাল্কহেডের মালিক এরশাদ মিয়া বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ৭ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শাহপরান বাল্কহেডের চালক মো. নাসির এবং শ্রমিক মঙ্গল চন্দ্র, ফয়সাল হোসেন ও আবদুল হান্নান সিলেট থেকে পাথর বোঝাই করে মুন্সীগঞ্জে সিমেন্ট কারখানায় নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে বাল্কহেডের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে তা মেরামত করার জন্য তাঁরা মহিউদ্দিন ও তাইজুলকে খবর দেন। তাঁরা বাল্কহেডের ইঞ্জিন মেরামত শেষে পরীক্ষা করার কথা বলে ইচ্ছা করে বাল্কহেডটি বক্তাবলীর চরে নিয়ে যান।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে আরও জানা যায়, বক্তাবলীর চরে যাওয়ার পর মহিউদ্দিন ও তাইজুল বাল্কহেডের চালক ও তিন শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা করে লাশ হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেন। এর মধ্যে নাসির ও ফয়সালের লাশ পাওয়া গেলেও মঙ্গল চন্দ্র ও আবদুল হান্নানের লাশ পাওয়া যায়নি। এরপর তাঁরা বাল্ডহেডে ডাকাতি করে ও মালামাল লুট করে নিয়ে যান।

অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) কে এম ফজলুর রহমান বলেন, বাল্কহেডের চার শ্রমিককে হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে বাল্কহেডের মালিক এরশাদ মিয়া বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ৭ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলার বাদী, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এই রায় ঘোষণা করা হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, আদালতের রায়ে তাঁরা আসামিপক্ষ ন্যায়বিচার পাননি। তাঁরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করবেন।