নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণে দগ্ধ একজনের মৃত্যু, দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীর একটি ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে এক পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে ওই ভবন পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ মো. মামুন (২৭) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুনের মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া দগ্ধ জীবন মিয়া ও পারভেজ হোসেনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি। মামুন সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে ইপিজেডে অবস্থিত অনন্ত অ্যাপারেলস পোশাক করখানার সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের মোবারক আলীর ছেলে।

শুক্রবার সকালে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণে সাততলা ভবনের চারতলার ফ্ল্যাটের তিন কক্ষের দরজা ভেঙে পড়ে আছে। জানালার কাচ ভাঙা। মেঝেতে বিছানো তোশক, চাদর, বালিশ ও কাপড় আগুনে পুড়ে গেছে। সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মেঝেতে। ফ্ল্যাটটি মেসবাসা হিসেবে পোশাক কারখানা শ্রমিকদের ভাড়া দেওয়া হয়েছিল।

ওই ভবনের দোতলার বাসিন্দা মো. হামিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিস্ফোরণে ভবনটি কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের পর দেখি ধোঁয়ায় অন্ধকার। ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙা, ভেতরে আগুন জ্বলছে। আগুনের ভয়ে দ্রুত নিচে নেমে দেখি, দগ্ধ দুজন পুকুরে পানিতে লাফিয়ে পড়েছেন। আগুনে পোড়ার যন্ত্রণায় তাঁরা চিৎকার করছেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার মো. তুহিন বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই বিস্ফোরণের পর আগুনে পোড়া দগ্ধ তিনজন নিজেরাই নিচে নেমে আসেন। তাঁদের সবার শরীর পোড়া। আগুনে দুই ব্যক্তি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অন্যজন মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন। পরে তাঁদের স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান।

ওই ভবনের নিরাপত্তাপ্রহরী আবদুল বারেক হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণে হলে লোকজন আতঙ্কে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ভবনের বাসিন্দারা আগুন বলে চিৎকার শুরু করেন। দগ্ধ তিনজন বিবস্ত্র অবস্থায় দৌড়ে নিচে নেমে আসেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দগ্ধ মামুন নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। দগ্ধ অন্য দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁদের মধ্যে একজনের শতভাগ পুড়ে গেছে।

এ বিষয়ে আদমজী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সর সিনিয়র স্টেশন অফিসার রুহুল আমিন প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা (দগ্ধ ব্যক্তিরা) রুমের ভেতরে ছিলেন। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, লিকেজ থেকে ওই রুমে গ্যাস জমেছিল। তাঁরা কেউ ম্যাচ বা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করলে স্পার্ক থেকে আগুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কদমতলীর ওই ভবনের চারতলার ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণে তিন শ্রমিক দগ্ধ হন। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।