নারায়ণগঞ্জের ‘মৃত’ মেয়েটির ফিরে আসাসহ পুরো ঘটনা বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে ‘মৃত’ কিশোরীর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনা নিয়ে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, ওই ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার, রিমান্ড, স্বীকারোক্তি ও ভুক্তভোগীর (মেয়েটি) ফিরে আসাসহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুসন্ধান করবেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট, বাদী, ভুক্তভোগী, আসামিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তব্য নেবেন। অনুসন্ধান করে ৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেবেন। অনুসন্ধানকালে আসামিপক্ষ মনে করলে তাঁর পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত রাখতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও থাকবেন। পরবর্তী আদেশের জন্য ৫ নভেম্বর দিন রাখা হলো।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হাছিনা মমতাজ।

আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক অনুসন্ধানকালে আসামি চাইলে তাঁর আইনজীবী তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারবেন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও উপস্থিত থাকবেন—এমন আদেশ বিচারব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এর আগে গত ৪ জুলাই ১৫ বছর বয়সের এক কিশোরী নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন তাকে না পেয়ে থানায় প্রথমে জিডি ও পরে মামলা করে। ওই মামলায় পুলিশ আবদুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা ‘স্বীকার করে’ গত ৯ আগস্ট আদালতে জবানবন্দি দেন। তবে ‘অবিশ্বাস্যভাবে’ ঘটনার ৫১ দিন পর গত ২৩ আগস্ট ওই কিশোরী ফিরে আসে। পরে সে জানায়, এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর এলাকার ভাড়া বাড়িতে সংসার করছে সে। আদালত পরে ওই কিশোরীকে তার পরিবারের জিম্মায় দেন। মেয়েটি ফিরে আসার পর ওই মামলার আসামি আবদুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মারধর করে তাঁর ছেলেসহ অন্যদের কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে মেয়েটির বাবার করা মামলার নথিপত্র তলব ও তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে ওই আবেদনটি (রিভিশন) করেন। ২৭ আগস্ট শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আসামিদের গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি রেকর্ড বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে মামলার সিডি (মামলার নথি) নিয়ে ওই দিন আসতে বলা হয়। ধার্য তারিখে দুই কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হন। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত ২৪ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল আদেশ দেওয়া হয়।