নারায়ণগঞ্জের সেই মসজিদ খুলে দেওয়ার দাবি

নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লায় গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সেই বাইতুস সালাত জামে মসজিদ নামাজ আদায়ের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসী। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদটির সামনে কয়েক শ স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। তাঁরা বলছেন, এক বছর কেটে গেলেও মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে না। এক সপ্তাহের মধ্যে খুলে না দিলে তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও করা হবে।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাইতুস সালাত জামে মসজিদের নিহত ইমাম আব্দুল মালেক নেছারির ছেলে মো. নাঈম। মানববন্ধন শেষে তিনি বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।

বক্তারা বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে মসজিদটি বন্ধ রাখায় ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে মসজিদটি নামাজের জন্য অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। এ ছাড়া এলাকার মুসল্লিদের নামাজ আদায়েও ব্যাঘাত ঘটছে। তাই তিতাসের তদন্ত কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলসহ আগামী শুক্রবারের মধ্যে মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। অন্যথায় তিতাস অফিস ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদ নামাজের জন্য খুলে দিতে প্রশাসনকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও খুলে দেওয়া হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস ও ডিপিডিসি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন না দেওয়ায় মসজিদ খুলতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে মুসল্লিরা মসজিদ কমিটিকে দায়ী করছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে মসজিদ খুলে না দিলে তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছেন মুসল্লিরা।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদ খুলে দেওয়ার বিষয়ে চারটি সংস্থার (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ডিপিডিসি ও তিতাস গ্যাস) প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তিনটি সংস্থা ইতিমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু তিতাসের প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে মুসল্লিসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করে। মামলায় মসজিদ পরিচালনা কমিটি ছাড়াও তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে সড়কের মাটি খুঁড়ে তিতাস গ্যাসের পরিত্যক্ত সরকারি তিনটি (রাইজারের পাইপলাইন) পাইপলাইনে ৯টি ছিদ্র পাওয়া যায়। ওই পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ চালু ছিল। ওই ছিদ্র দিয়ে মাটি ভেদ করে গ্যাস মসজিদের ভেতরে জমা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে।

এ ঘটনায় তিতাস গ্যাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাসহ ৮ জন, ডিপিডিসির মিটার রিডারসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সিআইডি মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। সে সময় সিআইডির কর্মকর্তা জানান, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। বর্তমানে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলার আসামি সবাই জামিনে আছেন।