প্রধান আসামি কৃষক লীগের নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শিশু গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হারুন মণ্ডল
সংগৃহীত

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শিশু (১০) ধর্ষণের মামলায় পলাতক প্রধান আসামি কৃষক লীগ নেতা হারুন মণ্ডলকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ধর্ষণ মামলায় এজাহারভুক্ত আরও চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বিকেলে শিশুর বাবার করা মামলায় পুলিশ এঁদেরকে গ্রেপ্তার করে।

হারুন মণ্ডল উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের ঘাইলারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কাকরকান্দি ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র নিশ্চিত করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অভিযুক্ত প্রধান আসামি হারুন মণ্ডলসহ গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশ হারুনকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। রিমান্ড শুনানি শেষ হলে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হবে।

এজাহার, শিশুটির পরিবার ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের ঘাইলারা গ্রামে হারুন মণ্ডলের বাড়িতে কয়েক মাস আগে শিশুটি গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। এই সময়কালে শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন বাড়ির কর্তা হারুন। সপ্তাহখানেক আগে ওই শিশু গৃহপরিচারিকার কাজ বাদ দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসে। কয়েক দিন পর তার ভাই ও ভাবি আবার হারুনের বাড়িতে কাজের জন্য যেতে বলেন। কিন্তু ওই শিশু হারুনের বাড়িতে কাজে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে কারণ জানতে চাইলে ওই শিশু তার ভাবিকে ধর্ষণের বিষয়টি জানায়।

অভিযুক্ত হারুন মণ্ডল কাকরকান্দি ইউনিয়নের কৃষক লীগের সভাপতি। তিনি যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে যথাযথ শাস্তির দাবি জানাই। আমাদের দল কোনো অপরাধীর দায় নেবে না।
নাজিম আহমেদ, সভাপতি, কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ

শিশুটির পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য হারুন গোপনে একটি সালিস ডাকেন। সেই সালিসে বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া হয় পরিবারকে। তবে সালিসের সপ্তাহখানেক পর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। এরপর গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত হারুনের শাস্তি দাবি করে বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনসহ অনেকে পোস্ট দেন।

পুলিশ এ ঘটনায় তৎপর হয়ে উঠলে সালিসকারীদের চাপে মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই শিশুটিকে এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয় পরিবার। পরে গতকাল সকালে পুলিশ পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার গণকুঠরা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এরপর বুধবার সকালেই পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আশরাফুল আজীম ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে শিশুটির বাবা থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় হারুন মণ্ডলকে প্রধান আসামি করে মোট আটজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে হারুন বাদে বাকি সাতজনকে জোর করে সালিস-বিচার চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে আসামি করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আশরাফুল আজিম তাঁর কার্যালয়ে এই ঘটনায় সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। গতকালই শেরপুর সদর হাসপাতালে শিশুটিকে মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়েছে।

মামলার পর বিকেলেই পুলিশ হারুন মণ্ডলের ভাই তাজুল ইসলাম, পিঠাবুনির গ্রামের আসমত আলী, পূর্ব মানিককুড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, গাছগড়া গ্রামের জাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মামলার প্রধান আসামি হারুন মণ্ডলকে ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনানী বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আশরাফুল আজিম তাঁর কার্যালয়ে এই ঘটনায় সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। গতকালই শেরপুর সদর হাসপাতালে শিশুটিকে মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে আজ বিকেল পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে প্রধান আসামি হারুন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। এর আগে এজাহারভুক্ত আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড আবেদনের জন্য আজ গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনকেই আদালতে তোলা হয়েছে। রিমান্ড শুনানি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বাকি তিন আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ ঘটনায় উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক খন্দকার শফিক আহমেদ দাবি করেছেন, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি হারুন মণ্ডল ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি নন। তবে জানতে চাইলে উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত হারুন মণ্ডল কাকরকান্দি ইউনিয়নের কৃষক লীগের সভাপতি। তিনি যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে যথাযথ শাস্তির দাবি জানাই। আমাদের দল কোনো অপরাধীর দায় নেবে না।’

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত হারুন মণ্ডল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। আমি মেয়েটিকে কাজের পাশাপাশি লেখাপড়ারও ব্যবস্থা করেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু লোক উঠেপড়ে লেগেছে।’ এরপর থেকে গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত তিনি মুঠোফোনটি বন্ধ রেখে আত্মগোপনে থাকেন।