নিক্সনপন্থীদের সভা, তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশের অভিযোগ

ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি কাজী হেদায়েত উল্লাহ সাকলাইন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের নেতারা বর্ধিত সভা করেছেন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দুই উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে দুটি সভা হয়।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগ ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যার নেতৃত্বে বিভক্ত। জাফরউল্যার অনুসারীদের অভিযোগ, ছুটির দিনে দলীয় কার্যালয়ের তালা ভেঙে নিক্সনপন্থীরা এই সভা করেছেন। এত দিন দুটি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ই জাফরউল্যাপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাঁরাই কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতেন।

ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেদায়েত উল্লাহ সাকলাইন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান, সদস্য সাহাদাত হোসেন।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে প্রায় তিন বছর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে  বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই সুপারিশ করে ঢাকায় পাঠালেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত অনুমোদন দেয়নি।

কাজী হেদায়েত উল্লাহ বলেন, সামনে নির্বাচনগুলো কীভাবে সংগঠিত করা যায়, দলকে শক্তিশালী করতে কী কী প্রয়োজন, যেসব কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব কমিটি কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সেসব বিষয়ে শুক্রবারের বর্ধিত সভায় আলোচনা হয়েছে।

ভাঙ্গায় কাজী জাফরউল্যাপন্থী আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সহসভাপতি সাইফুর রহমান। তাঁকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন জাফরউল্যাপন্থীরা। বর্ধিত সভার বিষয়ে সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শুক্রবার কোনো বর্ধিত সভা হয়নি। বিনা নোটিশে এবং গায়ের জোরে কয়েকজন ব্যক্তি কার্যালয়ের তালা ভেঙে ঢুকে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার বের হয়ে এসেছেন।

তবে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান বলেন, ‘আমরা তালা ভাঙতে যাব কেন। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমাকে ও সভাপতিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের নাটক করেছিল জাফরউল্যাপন্থীরা। কিন্তু কেন্দ্র তাতে সায় দেয়নি।’

সদরপুর উপজেলায় বর্ধিত সভার আগে নিক্সনপন্থীদের মিছিল। শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে একই সময়ে মিছিলের পর নিক্সনপন্থীদের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। উপজেলা চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত স্টেডিয়াম–সংলগ্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. বদিউজ্জামান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নিক্সনপন্থী হিসেবে পরিচিত সদরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান। জাফরউল্যাপন্থীরা তাঁকে ‘বহিষ্কৃত’ বলে থাকেন।

আওয়ামী লীগ নেতা কাজী শফিকুর রহমান বলেন, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিত কর্মীদের নিয়ে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

এ বর্ধিত সভার বিষয়ে কাজী জাফরউল্যাপন্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা বলেন, ‘ওটা কোনো বর্ধিত সভা নয়। নিক্সনপন্থীদের অফিস দখলের সভা।’ তিনি বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের তালা ভেঙে ঢুকে কাজী জাফরউল্যার ছবি ভাঙচুর করে বর্ধিত সভার নামে সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে।