নিখোঁজ ভাই–বোনের লাশ পাওয়া গেল খাটের নিচে, মামা পলাতক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় নিখোঁজের পাঁচ ঘণ্টা পর বাসার দুই খাটের নিচ থেকে স্কুলপড়ুয়া দুই ভাই-বোনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের নিজের বাড়ির দুটি ঘরের খাটের নিচ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার পরপর গতকাল রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত দুই শিশুর বাবা সৌদিপ্রবাসী কামাল মিয়া, মা হাসিনা বেগম, খালা হামিদা বেগম (৩০), প্রতিবেশী এক চাচা ফালু শাহ ওরফে হালু শাহ ওরফে গামছা শাহকে (৫৫) থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

তবে ঘটনার পর থেকে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার খোদাদাউদ গ্রামের বাসিন্দা নিহত শিশুদের মামা বাদল মিয়া (৩৫) পলাতক। দুদিন আগে তিনি ওই বাসায় বেড়াতে আসেন। ছেলেটি যখন নিখোঁজ হয়, তখনো তিনি বাসায় ছিলেন। মেয়েটি নিখোঁজের পর থেকে তাঁকে কেউ আর দেখেননি। তিনি কাউকে না বলে বাড়ি থেকে চলে গেছেন এবং তাঁর মুঠোফোন বন্ধ। দুই শিশুর বড় বোন মামাকে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন।

নিহত দুই ভাই-বোন হলো সাহেবনগর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী কামাল মিয়ার মেয়ে শিপা আক্তার (১৪) ও ছেলে কামরুল হাসান (১০)। শিপা বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগে ছুটিতে দেশে আসেন সৌদিপ্রবাসী কামাল। নিহত শিশুরা দুই বোন ও এক ভাই ছিল। ছয় থেকে সাত বছর আগে বড় বোন তানজিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। তিনি বাঞ্ছারামপুরের সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চাকরি করেন।


স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা তিনটা থেকে কামরুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সে সময় কামরুলের মা হাসিনা বেগম রান্নাঘরে ভাত রান্না করছিলেন। ছেলের নিখোঁজের কথা শুনে মা হাসিনা তাঁর কিশোরী মেয়ে শিপাকে রান্নাঘরে ভাতের মাড় গালার কথা বলে স্বামী কামালের সঙ্গে ছেলেকে খুঁজতে বের হন। বিকেলে তাঁরা ছেলের খোঁজ চেয়ে এলাকায় মাইকিং করেন। বাড়িতে আসার পর সন্ধ্যা থেকে কিশোরী মেয়ে শিপাকেও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। রাত আটটার দিকে হাসিনা নিজের ভবনের পৃথক দুটি কক্ষের খাটের নিচ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় শিপা ও কামরুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা রাতে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। রাতেই বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পরিদর্শক (তদন্ত) ঘটনাস্থলে পৌঁছান। রাতে নিহত ভাই–বোনের লাশ উদ্ধার করে আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মা হাসিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেল থেকে আমার ছেলে কামরুলকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে খোঁজাখুঁজি শুরু করি এবং এলাকায় মাইকিং করাই। সন্ধ্যার পর মেয়ে শিপাও নিখোঁজ হয়। রাত আটটার দিকে বাড়ির একটি কক্ষের খাটের নিচে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পাশের বাড়ির লোকজনকে ডেকে আনি। পরে পাশের কক্ষের আরেকটি খাটের নিচে ছেলের লাশ দেখতে পাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো শত্রু নেই। কে আমার ছেলে ও মেয়েকে মারল বুঝতে পারছি না।’

নিহত দুই শিশুর বড় বোন তানজিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে বিকেলে বাসায় ফিরি। সন্ধ্যায় মা ফোন করে ভাইকে পাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান। একটু পর আবার ফোন করে জানান যে আমার বোনকেও পাচ্ছি না। রাতে বাড়ি আসি। পরে থানায় যাই। দ্বিতীয়বার থানায় যাওয়ার সময় ফোনে আমাকে জানানো হয়, বাড়ির খাটের নিচে তাদের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল বিকেলের পর থেকেই আমার মামা পলাতক। তাঁকে খুঁজে বের করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাশাপাশি দুই কক্ষের খাটের নিচে ভাই-বোনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে। ওরা বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। এটি নিঃসন্দেহে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পুলিশ বিভিন্ন দিক থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুদের মা–বাবাসহ চারজনকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।