নিখোঁজের তিন দিন পর তরুণের পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিখোঁজের তিন দিন পর আজ সোমবার দুপুরে নাসিরুল ইসলাম (২০) নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের দরাপের ডাঙ্গী গ্রামের একটি নির্মাণাধীন বাড়ির বালু মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
নাসিরুল ইসলাম উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের হাজি দুদুখানপাড়া গ্রামের শাজাহান শেখের ছেলে। গত শুক্রবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
নাসিরুল ইসলামের মামা হাফেজ কামরুল ইসলাম বলেন, নাসিরুল মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। ছোটবেলায় নাসিরুল ও তাঁর মাকে ফেলে তাঁর বাবা অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে তাঁদের বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ করেন। রমজানের শুরুতে লকডাউন দিলে প্রথম দিনই নাসিরুল বাড়ি চলে আসেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, ৭ মে অনেক রাতে ফোন পেয়ে জানতে পারেন, একটি ফোন পেয়ে নাসিরুল বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর আর ফেরেননি। তাঁকে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে শোনেন উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের কাছাকাছি দরাপের ডাঙ্গী এলাকার নির্মাণাধীন মশিউর রহমানের বাড়ির ঘরের ভেতর মানুষের রক্ত দেখা গেছে। কিন্তু কার রক্ত তা জানা যায়নি।
ওই বাড়ির মালিক গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সুপার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, গোয়ালন্দ শহরে থাকায় প্রতিদিন সকালে বাড়ির কাজের খোঁজ নিতে আসতেন। ৮ মে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাজের খোঁজ নিতে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করেই ঘরের সামনে খোলা সিমেন্ট পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় মিস্ত্রিদের ঘর খুলে দেখতে বলেন। ঘরের ভেতর দেখেন মানুষের রক্ত ফ্লোরে ও বেড়ার সঙ্গে লেগে আছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে থানা–পুলিশকে জানানো হয়। তবে ওই দিন আর কিছু পাওয়া যায়নি।
নাসিরুলের ছোট মামা ফজলু ব্যাপারী বলেন, ঘরে রক্ত পাওয়ার পর খবর পেয়ে চারপাশে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে আবারও বাড়ির ভেতর ঢুকে চারপাশে খোঁজাখুঁজি করা হয়। এ সময় ঘরের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে কিছু বালু দেখে আগলা মনে হয়। একটি কাঠি দিয়ে খোঁচা দিলে মাটি দেবে যায়। এ সময় গন্ধ বের হয় এবং মাছি ঘিরে ধরে। তখনই সন্দেহ হয় এখানে কিছু আছে। পরে একটু মাটি খুঁড়েই মানুষের হাত দেখা যায়। পরে পুলিশ এসে বেলা আড়াইটার দিকে মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ শরীফ-উজ-জামান, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর প্রমুখ।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফ-উজ-জামান বলেন, লাশ উত্তোলন শেষে সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে তাঁর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে পুলিশ ঘাতকদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।