নিখোঁজের ১৩ ঘণ্টা পর মিলল কলেজছাত্রের লাশ

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্বাক্ষর দেব (সর্বডানে)। আজ রোববার তার মৃতদেহ চা বাগানে পাওয়া যায়।
ছবি: স্বাক্ষরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি চা–বাগান থেকে স্বাক্ষর দেব (১৭) নামের এক কলেজছাত্রের লাশ পাওয়া গেছে। আজ রোববার সকাল ছয়টার দিকে উপজেলার লাখাইছড়া চা–বাগানের সেকশনে লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল সে। গতকাল শনিবার রাতে তার নিখোঁজের বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।

স্বাক্ষর দেব উপজেলার ইছবপুর এলাকার কল্যাণ দেবের বড় ছেলে। তার বাবা উত্তর ভাড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ থেকে স্বাক্ষরের এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

সরেজমিনে আজ লাখাইছড়া চা–বাগানে গিয়ে দেখা যায়, স্বাক্ষরের লাশ মাটিতে পড়ে রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে স্বাক্ষরের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, দুটি ফ্যান্টা কোল্ড ড্রিংকসের খালি বোতল, ৪টি ওষুধের খোলস। তার মোটরসাইকেলে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভেতরে কাগজে মোড়ানো আরও কিছু জিনিস (সম্ভবত নাশতাজাতীয় খাদ্য) ছিল।

স্বাক্ষরের বাবা কল্যাণ দেব গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, গতকাল বিকেলে স্বাক্ষরের তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। সে বাসা থেকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বের হয়। পাঁচটার দিকে তার মা তাঁর মুঠোফোনে কল করলে রিসিভ করে অপরিচিত একজন। স্বাক্ষর কোথায় জিজ্ঞেস করলে অপর পাশ থেকে ‘স্বাক্ষর কে? স্বাক্ষর নামে কেউ নাই’ বলে ফোন রেখে দেয়। এরপর থেকে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। কয়েকবার ফোনে কল ঢুকেছে, কিন্তু রিসিভ করেনি কেউ।

এই মোটরসাইকেলে করেই শনিবার বিকেলে বের হয় স্বাক্ষর। মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার। এরপর থেকে আর তার খোঁজ মেলেনি। আজ রোববার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাখাইছড়া চা বাগানে। এখানেই আজ সকালে স্বাক্ষরের লাশ পাওয়া যায়।
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে স্বাক্ষরের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ, স্বাক্ষরের পরিবার, পাড়া–প্রতিবেশী ও তার বাবার সহকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তন্ন তন্ন করে খোঁজ করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ও রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ট্র্যাকিং করা হয়। একবার মুঠোফোনটি ভানুগাছ রোডে এবং অন্যবার ষাঁড়ের গজ এলাকার দিকে দেখায়। এই জায়গাগুলোসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সারা রাত ধরে তাঁরা স্বাক্ষরের খোঁজ করে বেড়ান। পরে সকাল ছয়টার দিকে তার লাশ পাওয়া যায়।

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুছ ছালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাতে অনেক চেষ্টা করেছি স্বাক্ষরকে খুঁজে বের করার। আজ সকালবেলা লাখাইছড়া চা–বাগানের শ্রমিকেরা চা–বাগানে লাশ পড়ে থাকতে দেখে ম্যানেজারকে বলেন। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তার শরীরে আঘাতে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটি বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত শেষে অনেক কিছু বলা যাবে। আলামত সংগ্রহের জন্য শ্রীমঙ্গল থানা, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মৌলভীবাজার ও সিলেট থেকে আসা সিআইডির স্পেশাল টিম কাজ করছে।’