নিচে নামছে পানির স্তর, অকেজো হচ্ছে নলকূপ

খুলনা জেলার মানচিত্র
প্রতীকী ছবি

খুলনা নগরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। নলকূপগুলোয় আর পানি উঠছে না। ফলে নগরে পানির সংকট তীব্র হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি না হওয়া ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। আর যদি তা ৩০ ফুটের নিচে নেমে যায়, তাহলে বাসাবাড়িতে মোটর দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

খুলনা ওয়াসার জরিপ অনুযায়ী, গত বছর এপ্রিল-মে মাসে খুলনা নগরের বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর (স্থিতি অবস্থা) ছিল ২৮ থেকে ৩১ ফুটের মধ্যে, সেখানে চলতি বছরের মে মাসে কোথাও কোথাও তা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ ফুটে নেমেছে। বৃষ্টি না হলে পানির স্তর আরও নিচে নামবে। তাতে নগরের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ নলকূপে পানি না ওঠার আশঙ্কা।

গত ২২ এপ্রিল বানরগাতী সোহরাওয়ার্দী কলেজ পাম্প এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গিয়েছিল প্রায় ৩৭ ফুট। এর আগে ১৯ এপ্রিল ফেরিঘাট ট্যাংক এলাকায় পানির স্তর ছিল ৩৮ দশমিক শূন্য ৪ ফুট ও ট্রাক টার্মিনাল পাম্প এলাকায় পানির স্তর ছিল ৩৭ দশমকি ৭২ ফুট নিচে।

খুলনা নগরে পানি সরবরাহের দায়িত্বে খুলনা ওয়াসা। খুলনাবাসীর খাবার পানির চাহিদা মেটাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। ২০০৮ সালে খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর নলকূপগুলো ওই প্রতিষ্ঠানের আওতায় চলে যায়।

নগরের ১৫ লাখ মানুষের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। নগরের অর্ধেক মানুষও এখনো ওয়াসার পানির আওতায় আসেনি। অন্যদিকে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তা লবণাক্ত। এ কারণে সুপেয় পানি থেকে শুরু করে সব ধরনের পানির জন্য নগরবাসী নিজস্ব ব্যবস্থার ওপরই নির্ভরশীল। কয়েক বছর আগেও বাসাবাড়ির পানির জন্য সাধারণ মোটর ব্যবহার করে পানি তোলা যেত। বর্তমানে পানি তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে সাবমারসিবল পাম্প। ওয়াসাও পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছে, কিন্তু তাতেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

■ গত বছর এপ্রিল-মে মাসে পানির স্তর (স্থিতি অবস্থা) ছিল ২৮-৩১ ফুটের মধ্যে ■ চলতি বছরের মে মাসে কোথাও কোথাও তা সর্বোচ্চ ৩৫-৩৭ ফুটে নেমেছে।

নগর ঘুরে দেখা গেছে, টুটপাড়া, বানরগাতী, নিরালা, নাজিরঘাট, শেখপাড়া, ফারাজিপাড়া, বসুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা নলকূপগুলো দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। নলকূপের আশপাশ শুকিয়ে আছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই পানির চাপ কমতে থাকে। মার্চে রাতে ও সকালে পানি পাওয়া গেলেও দেড় মাসের বেশি সময় ধরে নলকূপগুলোতে আর পানি উঠছে না। এ কারণে সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরঘাট এলাকার মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে তাঁর বাড়ির নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। আশপাশের যত নলকূপ আছে, সব কটিরই একই অবস্থা। তবে ওয়ার্ড কাউন্সলর পানির চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে দিয়েছেন। সেখান থেকেই এলাকার খাওয়ার পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

খুলনা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, খুলনায় প্রতিবছরই পানির স্তর ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি নিচে নেমে যাচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর আগের বছরের তুলনায় প্রায় চার ফুট নিচে নেমে গেছে। সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলার ফলে মাটির নিচের একটা স্তরে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে।