নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, ঝালকাঠিতে ওএমএস–টিসিবির লাইনে উপচে পড়া ভিড়

পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় টিসিবির ডিলার দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়েছেন। পণ্য না পেয়ে বাইরে হাহাকার করছেন ক্রেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের ফরিয়া পট্টি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ঝালকাঠিতে খোলাবাজারে (ওএমএস) ন্যায্যমূল্যে চাল, আটা ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ মানুষের ভিড় ও ডিলারের বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ভিড়ের কারণে পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অনেক ক্রেতার।

মাসখানেক ধরে ঝালকাঠিতে সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। এক মাসের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ১০ টাকা। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। এখন নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা ওএমএস ও টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। এমনকি জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ পণ্য কিনতে ওএমএস ও টিসিবির লাইনে ভিড় করছেন।

বাজারে গুটি স্বর্ণা চাল প্রতি কেজির দাম ৪০ থেকে ৪১ টাকা আর পাইজাম ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। বিআর-২৯ ৪৮ থেকে ৪৯, বিআর-২৮ ৫৩ থেকে ৫৪, মিনিকেট ৫৭ থেকে ৫৮, উন্নত মিনিকেট ৬০ থেকে ৬১, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৬৭, সেদ্ধ কাটারি ৯৩ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এক লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যা ১০ দিন আগেও ছিল ১৫০ টাকা। এক লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, ১০ দিন আগে ছিল ১৬০ টাকা। এ ছাড়া খুচরা দোকানে মোটা দানার মসুর ডাল ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এটি ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি-বিদেশি পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির খাদ্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে গুটি স্বর্ণা চাল প্রতি কেজির দাম ৪০ থেকে ৪১ টাকা আর পাইজাম ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। বিআর-২৯ ৪৮ থেকে ৪৯, বিআর-২৮ ৫৩ থেকে ৫৪, মিনিকেট ৫৭ থেকে ৫৮, উন্নত মিনিকেট ৬০ থেকে ৬১, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৬৭, সেদ্ধ কাটারি ৯৩ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুদির দোকানে আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায় এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। অন্যদিকে খোলাবাজারে (ওএমএস) প্রতি কেজি চাল ৩০ ও খোলা আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঝালকাঠি জেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও বরিশালের টিসিবির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতিদিন ওএমএসের ডিলারপ্রতি ৫০০ কেজি চাল ও ৫০০ কেজি আটা বরাদ্দ থাকে। সপ্তাহের ছয় দিন ওএমএসের দোকানে ১০ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারেন। পাঁচ কেজি হারে এক হাজার কেজি চাল ও আটা ২০০ মানুষ পেতে পারেন। কিন্তু প্রতিটি ডিলার পয়েন্টের লাইনে থাকেন ৩০০ থেকে ৪০০ জন মানুষ। কয়েক দিন ধরে এ ভিড় আরও বেড়েছে। আগে বিক্রি বিকেল পর্যন্ত চললেও, এখন দুপুরের মধ্যেই পণ্য শেষ হয়ে যায়।

জানা গেছে, ঝালকাঠিতে টিসিবির ডিলার রয়েছেন ৩৫ জন। পণ্য স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন একজন ডিলার পণ্য বিক্রি করছেন। টিসিবির ডিলার পয়েন্টেও বেলা বাড়তেই ভিড় বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ খাদ্যপণ্য না পেয়ে ফিরে যান বলে ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন।

ঘরে খাওয়ার লোক চারজন। টিসিবি থ্যাইকা কম দামে ত্যাল-ডাইল পাইলে কিছু পয়সা বাঁচে। কিন্তু দুই ঘণ্টা লাইনে খাড়াইয়াও হ্যেয়া ক্যেনতে পারি নাই।
শিরিন বেগম, স্বল্প আয়ের মানুষ

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন ঝালকাঠি শহরের ফরিয়া পট্টি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের লম্বা লাইন। পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিলার দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রেতারা পণ্য না পেয়ে বাইরে হাহাকার করছেন।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া। এ অবস্থায় কম দামে খাদ্যদ্রব্য কিনতে ফরিয়া পট্টি এলাকার টিসিবির ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন গৃহপরিচারিকা শিরিন বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে খাওয়ার লোক চারজন। টিসিবি থ্যাইকা কম দামে ত্যাল-ডাইল পাইলে কিছু পয়সা বাঁচে। কিন্তু দুই ঘণ্টা লাইনে খাড়াইয়াও হ্যেয়া ক্যেনতে পারি নাই।’

দুপুর ১২টার দিকে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানো মধ্যবিত্ত ঘরের এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁর স্বামীর বেতনে সংসার চলে না। ছেলেমেয়ে নিয়ে অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। তাই কম দামে চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

টিসিবির ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টিসিবির বরাদ্দ কম থাকায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বরাদ্দ বাড়িয়ে ক্রেতাদের ভোগান্তি কমানো উচিত। ওএমএসের ডিলার নান্না মিয়া বলেন, বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী চাল ও আটা সরবরাহ করতে ডিলারদের হিমশিম খেতে হয়। লাইনে দাঁড়ানো সব মানুষকে চাল দিতে না পেরে তাঁদেরও খারাপ লাগে।

জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় চাল কেনার জন্য ওএমএসের ডিলারদের ওপর চাপ বেড়েছে। তবে আপাতত বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী প্রথম আলোকে বলেন, টিসিবির নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ওএমএসের ডিলারদের বরাদ্দ বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।