নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে বাধা, প্রকৌশলীকে মারধর

এক কিলোমিটার সড়কের মেরামত দুই বছরেও শেষ হয়নি। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার নিশ্চিন্তপুর-প্রতাপপুর (ভায়া বামুজা পানদীঘি) সড়কের এক কিলোমিটার সড়কের মেরামত দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করতে বাধা দেওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী ও কর্মচারীকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদারকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।

এলজিইডির কাহালু উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মাজিদ বিন জাহিদ (৪০) বাদী হয়ে ঠিকাদার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত শনিবার কাহালু থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তিন দিন পর সোমবার তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত শনিবার সড়ক নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারে বাধা দিতে গেলে ঠিকাদার ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে (মাজিদ বিন জাহিদ) এবং তাঁর সঙ্গে থাকা এলজিইডির কার্য সহকারী আবদুর রউফকে মারধর করেন।

ঠিকাদার নুরুল ইসলাম কাহালু উপজেলার তেলিয়ান গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পিএম বেলাল হোসেনের ভাতিজা।

কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বলেন,‌ সরকারি কর্মকর্তাসহ দুজনকে মারধরের অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এ জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এজাহার ও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, নিশ্চিন্তপুর-প্রতাপপুর ভায়া বামুজা পানদীঘি সড়কের এক কিলোমিটার অংশ পাকাকরণ ও কার্পেটিংয়ের কাজের জন্য ২০১৮ সালের নভেম্বরের দিকে দরপত্র আহবান করা হয়। ৬৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দের এই কাজ পায় ঢাকার তাজওয়ার ট্রেড সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি করছেন স্থানীয় ঠিকাদার নুরুল ইসলাম। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ মের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এলজিইডির পক্ষে কাজটি তদারক করছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মাজিদ বিন জাহিদ।

মাজিদ বিন জাহিদ বলেন, ২০১৯ সালে কাজ শুরু করা হলেও মাটি খুঁড়ে ইটবালু ফেলে দীর্ঘদিন বেহাল ফেলে রাখা হয়। কয়েক দফা তাগাদা দেওয়ার পর খোয়া ফেলে আবারও লাপাত্তা হয় ঠিকাদারের লোকজন। দফায় দফায় তাগাদা দেওয়ার পরও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। খোয়া বিছানো সড়কে গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কার্যাদেশ শেষ হওয়ার দেড় বছর পর কার্পেটিং কাজের জন্য সাইটে পাথর-বিটুমিন আনা হয়েছে।

ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
আহসান হাবিব, উপজেলা প্রকৌশলী, কাহালু

শনিবারের ঘটনা সম্পর্কে প্রকৌশলী মাজিদ বিন জাহিদ বলেন, বেলা একটার দিকে সাইট পরিদর্শনে গিয়ে আগে খানাখন্দ ও গর্ত ঠিকঠাক করে কার্পেটিং করতে বলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল ইসলাম অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি চড়-থাপ্পড়, কিল–ঘুষিসহ মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। কার্য সহকারী আবদুর রউফ এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করেন নুরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

কাহালু উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, তাজওয়ার ট্রেড সিস্টেম লিমিটেড একই দরপত্রে তিনটি কাজ পেয়েছিল।
এর মধ্যে দুটি কাজ শেষ হয়েছে। উপসহকারী প্রকৌশলী ও কার্য সহকারীকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।