নির্ধারিত সময়ের দেড় বছর পরও সেতুর কাজ শেষ হয়নি, ভোগান্তি

ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় নড়িয়া-জাজিরা সড়কের ভাষাসৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলা সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ। পাশে নির্মাণাধীন সেতুর কয়েকটি পিলার। বুধবার তোলা ছবিপ্রথম আলো

ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাঁচ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা সদরে ভাষাসৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলা সেতুটি। ২০১৭ সালে সেখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের দেড় বছর পরও কাজ শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করে সেতুর কাজ করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার মানুষ।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। যাতায়াতের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেতুটি। পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ কারণে ২০১৫ সালে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

সেতু দিয়ে যাতায়াত করত নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সেতু বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। যানগুলোকে শরীয়তপুর সদরের প্রেমতলা হয়ে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

এলজিইডির শরীয়তপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, জনদুর্ভোগ কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশনকে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের জুনে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েক বার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ হয়নি। ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিল তুলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই ৩০ শতাংশের মধ্যে ৪টি পিলারের দুটির কাজ শেষ হয়েছে। দুটি এভারমেন্ট ওয়ালের মধ্যে শেষ হয়েছে একটি।

সেতুটি নির্মাণে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কাজে দেরি হওয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুক্তি বাতিল করা হবে। চলতি বছরের মার্চে নতুন নকশায় সেতুর কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
শাহাবউদ্দীন খান, উপজেলা প্রকৌশলী, নড়িয়া

নড়িয়ার মোক্তারের চর গ্রামের বাসিন্দা পারভেজ রহমান বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই কাজের এমন দশা। বছরের পর বছর পার হচ্ছে, কিন্তু কাজ এগোচ্ছে না। অনেক কষ্ট করে তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।

নতুন সেতু তৈরি না হওয়ায় লোকজনকে অন্য পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে সড়ক পথে পণ্য আনা–নেওয়া করতে সেতুটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে এটা বন্ধ। ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ বেশি খরচ হচ্ছে।

নড়িয়ার উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবউদ্দীন খান বলেন, সেতুটি নির্মাণে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কাজে দেরি হওয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুক্তি বাতিল করা হবে। চলতি বছরের মার্চে নতুন নকশায় সেতুর কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী আবুল হাসেম মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ কেন বন্ধ হয়ে আছে, তা জানি না। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এ কারণে সময়মতো কাজটি সম্পন্ন করা যায়নি।’

এলজিইডির শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাজাহান ফরাজি বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।