নির্বাচন ছাড়াই শ্রমিকনেতা

শ্রমিকদের অভিযোগ, শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কাগজপত্র শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।

  • ১৯৭৪ সালে গঠিত হয় মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন।

  • সর্বশেষ নির্বাচনে সভাপতিসহ চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

  • শ্রমিকনেতারা বলছেন, কখন তফসিল ঘোষণা, ভোট হয়ে গেল, কিছুই জানতে পারেনি।

  • ভীতসন্ত্রস্ত শ্রমিকেরা বদলি আর হামলার আশঙ্কায় ভোট নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না।

ঝিনাইদহ জেলার মানচিত্র

কাগজপত্র বলছে, নির্বাচন আয়োজনের জন্য পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি তফসিল ঘোষণা করেছে, তফসিল অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ, যাচাই-বাছাই, মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ করেছে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ১৩টি পদের সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের সদস্য শ্রমিকেরা এসবের কিছুই জানেন না। শ্রম অধিদপ্তরে নির্বাচনের কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

এমন ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নে। শ্রমিকনেতারা বলছেন, গোটা প্রক্রিয়া করা হয়েছে গোপনে টেবিলে বসে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৯৬৫ সাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মোবারকগঞ্জ চিনিকল। ১৯৭৪ সালে গঠিত হয় মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন। গঠনতন্ত্রে প্রতি দুই বছর পর ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের আইন রয়েছে। সেই নিয়মে ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সভাপতিসহ চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

একাধিক শ্রমিকনেতা বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি চিনিকলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাগত এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিদায় অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার দলীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজীম।

সেখানে বর্তমান পরিষদের দু-একজন ও সাধারণ শ্রমিকদের দু-একজন বর্তমান পরিষদের গুণগান করে তাঁদের আবারও রাখার প্রস্তাব করেন। এরপর থেকে শুরু হয় চক্রান্ত। হঠাৎ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর কুষ্টিয়া থেকে পাঠানো এক চিঠি দেখে তাঁরা হতাশ হয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন ২০২১-এর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী ফলাফল ও ভোটার তালিকা অত্র দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে, যার কিছুই তাঁরা জানেন না।

শ্রম অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফলাফল ও ভোটার তালিকা পাওয়ার পর দপ্তরের কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এক রিটের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন উপপরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক। সশরীর উপপরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন বা তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচনী সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকবেন, যেখানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। ইউনিয়নের চাঁদা প্রদানকারী সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, তা মনিটর করতে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। বাস্তবে এ দপ্তরের অজ্ঞাতসারে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনী ফলাফল পাঠানো হয়েছে, যা হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপন্থী হওয়ায় নির্বাচনী ফলাফল গ্রহণযোগ্য নয়।

শ্রম অধিদপ্তরে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, তারা চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেছে, যেখানে ৭ ফেব্রুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, একই দিন সকাল ১০টা থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোটার সংশোধনী আবেদন গ্রহণ, ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, একই দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি ও একই দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ওই দিনই বিকেল পাঁচটায় পদভিত্তিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।

নির্বাচনে বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম রসুল, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম-৩-সহ প্রায় সবাই নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু বর্তমান পরিষদের ইক্ষু বিভাগের সদস্য আনসার আলী চাকরি থেকে সদ্য অবসরে যাওয়ায় ওই স্থানে মোছা. সালমা খাতুনের নাম দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি ফলাফল তাঁদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে, যেটা সঠিক নিয়মে না হওয়ায় তাঁরা গ্রহণ করেননি।

বর্তমান কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, চিনিকল বাঁচানোর স্বার্থে পুরোনো কমিটি আবারও থেকে যাক, এটা শ্রমিকেরা চান। যে কারণে ভোট না করার কথা হয়েছে। কীভাবে নতুন পরিষদ তৈরি হবে জানতে চাইলে ‘সবকিছু হয়ে যাবে’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শ্রম দপ্তরে জমা দেওয়া কাগজপত্রে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে চিনিকলের কর্মচারী সোহেল আহম্মেদের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা ভোটের কোনো ফলাফল জমা দেননি। তিনি এখনো দায়িত্ব নেননি বলে জানান। শ্রম অধিদপ্তরের চিঠির বিষয়ে জানানোর পর বলেন, সেটা সাধারণ সভার কাগজ দিয়েছেন।