নির্বাচন সারা দেশে এক রকম, ভাঙ্গায় কেন অন্য রকম—আমার মনে এই প্রশ্ন

সুবল চন্দ্র সাহা

ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা একটিতে জয়ী হয়েছেন। বাকি ১৪টির মধ্যে ২টিতে বিএনপি–সমর্থিত দুজন এবং অন্য ১২টিতে স্থানীয় স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবির কারণ কী?

সুবল চন্দ্র সাহা: ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন। বিএনপির প্রার্থীদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার ছিল না। ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো সাংসদ নেই। এটি আমাদের জন্য সমস্যা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা প্রকাশ্যে–অপ্রকাশ্যে আমাদের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। আমরা কেন্দ্রকে সব জানাব। চরভদ্রাসনে মো. কাওসার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরও দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। কেন্দ্রে তাঁকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরোধিতার কারণে গণহারে প্রার্থীরা হেরেছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজয়ের পর বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ একক ক্ষমতায় মনোনয়ন দিয়েছেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রার্থী বাছাই করা হয়নি, অনেক অযোগ্য ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে...

সুবল চন্দ্র সাহা: দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে। ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন উপজেলায় বর্ধিত সভা করে যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক যাচাই–বাছাই করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা যাচাই-বাছাইয়ের পর সই করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। তাঁদের ব্যাপারে কোনো আপত্তিকর কথা আগে আমাদের কানে আসেনি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর বিরোধিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন—পরাজিত ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা এমনটা বলছেন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

সুবল চন্দ্র সাহা: এ বিষয়ে আমি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারানোর জন্য আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থীরা এক হয়েছিলেন। নৌকার প্রার্থী কোনোভাবে যাতে জয়ী হতে না পারেন, পরিকল্পিতভাবে একটি শক্তি সে জন্য কাজ করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা নিঃসন্দেহে জয়লাভ করতাম। আমাদের দলীয় প্রার্থী, নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন কোনো কোনো মহলের তৎপরতার কারণে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনী পরিবেশ কেমন ছিল? নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়েছে?

সুবল চন্দ্র সাহা: ভাঙ্গা-চরভদ্রাসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কিংবা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হারেননি, তাঁদের হারানো হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে সারা দেশে যেভাবে বিদ্রোহীরা হেরেছেন, ভাঙ্গায় সে রকম হয়নি। সারা দেশে এক রকম নির্বাচন হয়েছে, ভাঙ্গায় কেন অন্য রকম হলো—আমার মনে এই প্রশ্ন। সঠিকভাবে নির্বাচন হলে, দলের নেতারা আরও সক্রিয় হলে, আমাদের এমন ফল বিপর্যয় ঘটত না। নির্বাচনের মাঠে আমাদের নেতা–কর্মীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেননি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনের মাঠ নির্বিঘ্ন ছিল না—কিসের ভিত্তিতে এমন কথা বলছেন?

সুবল চন্দ্র সাহা: আমি মনে করি প্রশাসনের আরও কিছু করার ছিল। আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল। প্রশাসনকে সক্রিয় করতে অনেক চেষ্টা করেছি। গাজীরটেকে নির্বাচনে ভোট গণনা করে রেজাল্ট ঘোষণা করতে দেরি করা হয়। ডিসি, এসপি ও কাজী জাফর উল্যাহকে আমি বিষয়টি জানিয়েছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ভাঙ্গা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের এমন ফলাফলের কারণে আগামী দিনে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি কঠিন হয়ে পড়বে না?

সুবল চন্দ্র সাহা: আমাদের দলকে সুগঠিত করতে হবে। চিরুনি বাছাইয়ের মতো বাছাই করতে হবে। দলের বিরুদ্ধে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই আমাদের অনেক সতর্কতার মধ্যে দিয়ে এগোতে হবে। পাশাপাশি যাঁদের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তাঁদের সে পথ থেকে সরিয়ে আনতে হবে। আমরা আশাবাদী, আগামী দিনে আমরা বিজয়ী হব।