নির্যাতনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ, মামলা নেয়নি পুলিশ
পটুয়াখালীর বাউফলে আরাফাত হোসেন (৮) নামের এক শিশুশিক্ষার্থীকে নির্যাতনের দুই দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। শনিবার বিকেলে এমন অভিযোগ করেছেন শিশুটির বাবা বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাশ্রাদ্ধি গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান প্যাদা (৩২)।
আরাফাত ওই ইউনিয়নের কাশিপুর আল ইয়াছিন শিশু সদন হাফিজিয়া মাদ্রাসার নজরানা বিভাগের ছাত্র ছিল। আট-নয় মাস আগে ওই মাদ্রাসায় আরাফাতকে ভর্তি করা হয়। তার মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলোতে ‘বাউফলে শিক্ষকের নির্যাতন, পালাতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু’ শিরোনামে ২৬ আগস্ট সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
মো. হাসান প্যাদা বলেন, পড়া মুখস্থ না হওয়ায় গত রোববার বেলা দুইটার দিকে তাঁর একমাত্র সন্তান আরাফাতকে ধরে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর আহত করেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জিকিরউল্লাহ (৪৫)। এতে আরাফাতের মাথার হাড় ভেঙে যায় এবং ডান চোখে গুরুতর জখম হয়। কিন্তু বিষয়টি তাঁদের না জানিয়ে জিকিরউল্লাহ তাঁর আপন ছোট ভাই মো. কাওছারের (৪০) মাধ্যমে আরাফাতকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। অবস্থা ভালো না দেখে পরের দিন সোমবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁদের মুঠোফোনে জানানো হয়, আরাফাত ডান চোখের ব্যথায় অসুস্থ।
মো. হাসান প্যাদা বলেন, পড়া মুখস্থ না হওয়ায় গত রোববার বেলা দুইটার দিকে তাঁর একমাত্র সন্তান আরাফাতকে ধরে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর আহত করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জিকিরউল্লাহ।
হাসান প্যাদা বলেন, তিনি মাদ্রাসায় গিয়ে আরাফাতকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে তিনি আরাফাতকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সে মারা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাত ১১টার দিকে আরাফাতের লাশ বাউফলের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
হাসান প্যাদা অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় শনিবার শিক্ষক জিকিরউল্লাহ ও তাঁর ভাই কাওছারের বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই রোববার পটুয়াখালী আদালতে মামলা করবেন বলে তিনি জানান।
এ ঘটনার পর জিকিরউল্লাহ মাদ্রাসায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আরাফাতের দাদা নুর হোসেন প্যাদা বলেন, নির্যাতনের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরাফাত সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে বলে প্রচার করেছিলেন শিক্ষক জিকিরউল্লাহ। তিনি আরও বলেন, যদি সিঁড়ি দিয়েই পড়ে থাকে, তাহলে ঘটনার সময় না জানিয়ে দুই দিন পর তাঁদের জানানো হলো কেন? জিকিরউল্লাহ যদি অপরাধী না হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি পালাবেন কেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসা থেকে জানানো হয়েছে, আরাফাত সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিল। পরে সে মারা যায়। এ ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে মামলা হবে। কিন্তু আরাফাতের বাবা হাসান প্যাদা তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে এজাহার সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে।