টাঙ্গাইলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলছে বাস

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচল করছে দূরপাল্লার বাস। ছবিটি রোববার ভোরে সেতুর পূর্ব প্রান্তের টোলপ্লাজা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আন্তজেলা বাস চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই ঈদে ঘরমুখী মানুষ ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ছুটছে নিজ নিজ গন্তব্যে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু দূরপাল্লার বাসও বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচল করছে।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে আজ রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সেতু এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

রাত তিনটায় মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার কয়েকটি হোটেলে সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন যাত্রাবিরতি করে। ট্রাকগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই মালামালের ওপর যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়।

রংপুরগামী একটি ট্রাকের যাত্রী আবুল হোসেন জানান, ঢাকার একটি হোটেলে কাজ করেন তিনি। ঈদের কারণে হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদের পরেও বেশ কয়েক দিন বন্ধ থাকবে। তাই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ট্রাকে করে বাড়ি রওনা হয়েছেন তিনি। ঢাকা থেকে রংপুর যেতে ৩০০ টাকা ভাড়ায় ট্রাকটিতে উঠেছেন রাত ১২টার দিকে। এ সময় মহাসড়ককে কয়েকটি বাস চলাচল করতেও দেখা যায়।

রাত সোয়া তিনটার দিকে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির চেকপোস্টে যাত্রীবাহী একটি বাস দেখা যায়। চালকের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আলাপের পর বাসটি আবার রওনা দেয় বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে।

আজ ভোররাত পৌনে চারটার দিকে সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর ও টোলপ্লাজার দিকে অবস্থান করে যাত্রীবাহী অন্তত ১০টি বাস সেতু পার হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে যেতে দেখা যায়। তবে মহাসড়কে মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রচুর। এগুলোয় গাদাগাদি করে যাত্রীদের যেতে দেখা যায়।

অনেক ভেঙে ভেঙে অটোরিকশায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এসে ট্রাক বা মোটরসাইকেলে সেতু পার হয়ে পশ্চিম প্রান্তে যাচ্ছে। ছবিটি রোববার সকালে পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ভোরে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গোলচত্বর এলাকায় দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙে ভেঙে কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, কেউ ব্যাটারিচালিত অটোতে আসতে থাকেন। সেতুতে তিন চাকার এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তাই সেখান থেকে কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ ট্রাকে উঠে সেতু পার হন। সেখানে ভাড়ায় চালিত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল দেখা যায়। জনপ্রতি ২০০ টাকা করে দুজন যাত্রী নিয়ে মোটরসাইকেলগুলো সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্তের হাটিকুমরুল পর্যন্ত চলাচল করছে।

টাঙ্গাইলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহরাব উদ্দিন জানান, ঈদ উপলক্ষে বগুড়া গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। টাঙ্গাইল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসে মোটরসাইকেলে সেতু পার হবেন। পরে পশ্চিম প্রান্তে গিয়ে বগুড়ার দিকের যানবাহন ধরবেন। এভাবেই ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাবেন।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঢাকা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কীভাবে বাস সেতু পর্যন্ত আসছে, তা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল হুদা বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এভাবে মানুষ ট্রাক, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে যাতায়াত করায় এবং ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে বিভিন্ন যানবাহনে ওঠায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোয় কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

আন্তজেলা যাত্রীবাহী বাস চলাচল প্রসঙ্গে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত বলেন, নির্দেশ অমান্য করে দূরপাল্লার যেসব বাস আসছে, তাদের ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। কিছু বাস কৃষিশ্রমিক পরিবহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চলছে বলে দাবি করেন তিনি।