নিহতদের স্মরণে ৫ মিনিট স্তব্ধ ছিল নেত্রকোনা শহর

নেত্রকোনা ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে ৫ মিনিট শহর স্তব্ধ থাকে। বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে শহরের ছোট বাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে
প্রথম আলো

সকাল ১০টা ৪০ বাজার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন কাজ ফেলে সড়কে নেমে আসেন। আশপাশের বাসাবাড়ি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকেও বেরিয়ে আসেন অনেকে। সড়কের যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে যায়। শহরবাসী সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান ১৬ বছর আগে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি। পাশাপাশি ঘৃণা জানানো হয় জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতি।

আজ বুধবার নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে শহর পাঁচ মিনিট এভাবে স্তব্ধ থাকে। ২০০৫ সালে এদিনে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নেত্রকোনা জেলা সংসদ কার্যালয়ের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। ওই বোমা হামলায় নিহত হন আটজন। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

দিনটি উপলক্ষে সকাল সোয়া নয়টায় শহরের অজহর রোড এলাকায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। পরে সাড়ে নয়টায় ‘উদীচী ট্র্যাজেডি স্মৃতিস্তম্ভে’ ফুল দেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তফসির উদ্দিন খান প্রমুখ। এ সময় জেলা প্রেসক্লাব, উদীচী, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ, মিতালি সংঘ, শতদল সাংস্কৃতিক একাডেমি, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সকাল ১০টায় ছোট বাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল হয়। দুপুর ১২টায় নিহত ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত, শ্মশানের স্মৃতিফলকে ফুল দেওয়া ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়। এ ছাড়া আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শহরের ছোট বাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান ট্র্যাজেডি দিবস উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব মারুফ হাসান খান।

জেলা উদীচীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস। ২০০৫ সালে এ দিনে শহরের অজহর রোড এলাকায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে দিবসটি উপলক্ষে চলছিল উদীচীর প্রস্তুতি। এ সময় আত্মঘাতী এক হামলাকারী বোমার বিস্ফোরণ ঘটান।

বোমা হামলায় প্রাণ হারান জেলা উদীচীর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল, মোটরসাইকেল মেকানিক যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া, ভিক্ষুক জয়নাল ও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল বাকি মো. কাফিসহ আটজন। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।

থানা-পুলিশ জানায়, বোমা হামলায় পুলিশ বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করে। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনে আসামি জেএমবির কমান্ডার সালাউদ্দিন, শুরা সদস্য আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। অন্যদিকে ২০০৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সালাউদ্দিন ও ইউনুছ আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সালাউদ্দিনকে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ২০১৪ সালে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তিনি এখনো পলাতক। বাকি আসামিদের রায় কার্যকর করা হয়েছে।