নেচে-গেয়ে উদ্যাপন

এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ঢাকার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। গতকাল মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরপরই নেচে-গেয়ে শুরু হয় এ আনন্দ উদ্যাপন। সেরা স্কুলগুলোয় জিপিএ-৫ পায়নি—এমন শিক্ষার্থী খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না।
এবার হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। ঢাকা বোর্ডে প্রথম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর হয়েছিল তৃতীয়। জেএসসি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ ইমামুল হুদা জিপিএ-৫ পায়নি এমন আট ছাত্রের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হোঁচট খেয়ে তারা কতটা শক্তি নিয়ে ফিরে এল সেটিই বড় কথা। আমার বিশ্বাস, ওরা ফিরে আসবে।’
দুপুর ১২টার দিকে কলেজের মূল ফটক খুলে দিলে শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা দলবেঁধে কলেজ চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। এরপর ঘণ্টা দুয়েক শুধু ‘রাজউক, রাজউক’ স্লোগান আর ঢোলের তালে তালে চলে শিক্ষার্থীদের নাচ। আদিবা, মনীষা, অর্চি, তন্দ্রা, ফারিয়া, প্রত্যয়ী ছয় বন্ধু ফল প্রকাশ উপলক্ষে একই রকম জামা পরে এসেছিল। তারা সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তন্দ্রা বলল, ‘সারা বছর অনেক কষ্ট করেছি আমরা, এখন ওই কষ্টটাকে কষ্ট মনে হচ্ছে না।’
অভিভাবক কাকলী সাহা বলেন, ‘নিজের লেখাপড়ার ফলাফলের আনন্দ সেভাবে উপলব্ধি করিনি। সন্তানের সাফল্যকে নিজের মনে হচ্ছে বলেই আনন্দ করছি।’ ভালো ফলাফলের কারণ হিসেবে বললেন, এটি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ‘প্যাকেজ’।
ঢাকা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় এবার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল। ১ হাজার ৫১১ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৪৪২ জন। ফল ঘোষণার পরই কৃতী ছাত্রীদের অভিনন্দন জানাতে মাঠে নেমে পড়ে অন্য ছাত্রীরা। ঢোলের তালে তালে ঘুরে ঘুরে নাচতে দেখা যায় আনন্দে উড়তে থাকা একঝাঁক কৃতী ছাত্রীকে।
কথা হয় নাফিসা জামান, ফারিয়া রহমান, আমরিন সরকার ও তাসনিম জাহানসহ কমপক্ষে ১০ ছাত্রীর সঙ্গে। সবার মুখে হাসি। তবে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য অনেকে কষ্ট কম করে ভালো ফল করেছে—এ নিয়ে তাদের আক্ষেপের শেষ নেই। যারা স্কুলের পরীক্ষায় খুব একটা ভালো করে না, তারাও জিপিএ-৫ পাচ্ছে—এ নিয়েও অনুযোগ আছে কারও কারও। প্রায় সবাই বলেছে, স্কুলের পর তারা তিনটি থেকে ছয়টি বিষয়ে আলাদাভাবে কোচিং করেছে।
তাপসী রায় নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমরা সবাই আসলে কষ্ট করেছি। ছোট ছেলেটাকে সঙ্গে করে আমাকেও এখানে-ওখানে ছুটতে হয়েছে।’
তবে স্কুলের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন বললেন, বাইরে কোচিং করার প্রয়োজন নেই। অভিভাবকেরা অতি উৎসাহী হয়ে কোচিংয়ে ছুটছেন।
ঢাকা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ৪৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৯৫ জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল ও কলেজ আছে তালিকার ৪ নম্বরে। এরপর যথাক্রমে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, টঙ্গীর সফিউদ্দীন সরকার একাডেমি, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়, হলি ক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নরসিংদীর এন কে এম হাইস্কুল অ্যান্ড হোমস, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল।