নেত্রকোনায় আ.লীগের প্রার্থীসহ ৪১ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত

ইউপি নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নেত্রকোনার পূর্বধলা, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার ৪১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পূর্বধলায় ২০ জন, কলমাকান্দায় ১৬ জন ও দুর্গাপুরে ৫ জন। তাঁদের মধ্যে পূর্বধলায় একজন আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ওই প্রার্থী হলেন পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল কাদির। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারের ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে তিনি পরাজিত হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৩৫৯টি। ওই ইউনিয়নে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১৭ হাজার ১২১।

ইউপি নির্বাচন বিধিমালা ২০১০–এর ৪৪–এর ৩ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচনে ভোটারদের দেওয়া মোট বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার জেলার ৩টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১০৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফলাফল স্থগিত করা হয়। তাই ২৪টি ইউনিয়নে ১০৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪১ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

যাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তাঁরা হলেন পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আবদুল কাদির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. আবদুর রাশিদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদুল হক ও মো. আজিম উদ্দিন খান; আগিয়া ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. সালেহ্ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত সাবিকুল আনিছ; নারান্দিয়া ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. তোফাজ্জল ইসলাম; জারিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাজল মিয়া; বিশকাকুনি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. আবদুল মজিদ; ঘাগড়া ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. নজরুল ইসলাম; বৈরাটি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মোহাম্মদ আলী তালুকদার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম জজ মিয়া; হোগলা ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মোহাম্মদ আবদুল গফুর, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুক খান, হুমায়ূন কবির ও বুলবুল মির; গোহালাকান্দা ইউনিয়নে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন মনোনীত সিংহ প্রতীকের মো. শফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম আর বি জাকির হোসেন তালুকদার; খলিশাউড় ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. মাজহারুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী।

কলমাকান্দায় ৭টি ইউনিয়নের জামানত হারানো ১৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল মোমেন, মো. সাখাওয়াত হোসেন ও জাকের পার্টির মো. কামাল মিয়া; নাজিরপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রাজু আহম্মেদ; পোগলা ইউনিয়নে মোজাম্মেল আলম খান, মো. রতন মিয়া, মো. শামছুল ইসলাম ও রাসেল মিয়া; বড়খাপন ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী অঞ্জন সরকার; লেংগুরা ইউনিয়নে মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মো. আবু রায়হান; কৈলাটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাসির উদ্দিন; রংছাতি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আফতাব উদ্দিন, মীর আইয়ুব নবী, মো. আবদুর রাজ্জাক ও মো. সুরুজ মিয়া।

দুর্গাপুরে তিনটি ইউনিয়নে পাঁচজন হলেন বিরিশিরি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিবাস সরকার, গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মোস্তফা কামাল, স্বতন্ত্র আশরাফ হোসেন, কাকৈরগড়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হামিদ বেগ ও মো. ফজলুল কাদের।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল লতিফ শেখ ওই ৪১ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রত্যেক প্রার্থীকে সরকারি কোষাগারে পাঁচ হাজার টাকা করে জামানত দিতে হয়। সেই জামানতের টাকা ফেরত পেতে ওই ইউনিয়নের মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ পেতে হয়। যেসব প্রার্থী এই পরিমাণ ভোট পাবেন না, তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আবদুল কাদির বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা দুই গ্রুপের হওয়ায় আমার পক্ষে একজনও কাজ করেন নাই। এই ইউনিয়নে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। গতবার নির্বাচনেও নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছিলেন। তখনো দলের দুই পক্ষ পছন্দের বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছিলেন। এবারও তা করেছেন। তাই নির্বাচনে আমার এই বিপর্যয়।’ তবে পৃথক দুটি পক্ষের নেতাদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের টানা তিনবারের সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীর প্রতীক) মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন বলেন, ‘আবদুল কাদিরের ধারণা সত্য নয়। দলের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। জনগণ যাঁকে পছন্দ করেছেন, তাঁকেই নির্বাচিত করেছেন।’