নেত্রকোনায় তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি

নেত্রকোনা জেলার মানচিত্র

নেত্রকোনায় তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। গতকাল রোববার জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও পূর্বধলা উপজেলার ২৫টি ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাত্র আট ইউপিতে জয়লাভ করেছেন। বাকি ১৭টির মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ৪টিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। একটিতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হলেও ফলাফল স্থগিত করা রয়েছে।

বেসরকারিভাবে কলমাকান্দার আট ইউপির তিনটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং দুটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাঁরা হলেন কলমাকান্দা সদর ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবদুল আলী বিশ্বাস (ঘোড়া প্রতীক), রংছাতিতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আনিছুর রহমান পাঠান (আনারস প্রতীক), নাজিরপুরে আওয়ামী লীগের আবদুল আলী (নৌকা প্রতীক), কৈলাটিতে আওয়ামী লীগের মো. জয়নাল আবেদিন (নৌকা প্রতীক), পোগলায় আওয়ামী লীগের মো. মোজাম্মেল হক (নৌকা প্রতীক), লেঙ্গুরায় জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়া (আনারস প্রতীক) এবং বড়খাপনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক)। খারনৈ ইউপির ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হলেও ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। তবে যে পর্যন্ত গণনা হয়েছে, তাতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ওবায়দুল হক (ঘোড়া প্রতীক) বেশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাত্র আট ইউপিতে জয়লাভ করেছেন। বাকি ১৭টির মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ৪টিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউপির তিনটিতে আওয়ামী লীগ, তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং একটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন। তাঁরা হলেন কুল্লাগড়া ইউপিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আওয়াল (আনারস প্রতীক), দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুল ইসলাম (আনারস প্রতীক), চণ্ডীগড়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুল হক আলম সরকার (আনারস প্রতীক), বিরিশিরিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম (নৌকা প্রতীক), বাকলজোড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ইয়াকুব তালুকদার (মোটরসাইকেল প্রতীক), কাকৈরগড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিব্বির আহাম্মেদ তালুকদার (নৌকা প্রতীক) এবং গাঁওকান্দিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবদুর রাজ্জাক সরকার (নৌকা প্রতীক)।

পূর্বধলার ১০টি ইউপির মধ্যে মাত্র ২টিতে আওয়ামী লীগ এবং ৮টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এঁরা হলেন গোহালাকান্দায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন (আনারস প্রতীক), হোগলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম আকন্দ (চশমা প্রতীক), ঘাগরায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ কে এম মাজাহারুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক), বিশকাকুনিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আল আমিন (আনারস প্রতীক), বৈরাটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ অনিছুজ্জামান তালুকদার (আনারস প্রতীক), আগিয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সানোয়ার হোসেন চৌধুরী (চশমা প্রতীক), জারিয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম মণ্ডল (ঘোড়া প্রতীক), পূর্বধলা সদরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমান (মোটরসাইকেল প্রতীক), খলিশাউড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কমল কৃষ্ণ সরকার (নৌকা প্রতীক) এবং নারান্দিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবদুল কুদ্দুস (নৌকা প্রতীক)।

দলের এমন বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস, দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান ও পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কোনো ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই সঠিক হয়নি। এর মধ্যে দলের কিছু নেতা অন্য প্রার্থীদের পক্ষ নিয়েছেন। ওই নেতাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে, আবার কেউ গোপনে কাজ করেছেন। তাই নির্বাচনের ফলাফলে এমন বিপর্যয় হয়েছে।