নেত্রকোনায় বসত হারাচ্ছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে অপরিকল্পিতভাবে সাদা মাটি উত্তোলনের ফলে অনেক গারো, হাজং ও হাদি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। তাদের জীবন-জীবিকাসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায়ও অপরিকল্পিতভাবে সাদা মাটি উত্তোলনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা নিয়মের মধ্যে থেকে সাদা মাটি উত্তোলনের কাজ পরিচালনাসহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।

৮ থেকে ১০ এপ্রিল ১০ সদস্যের একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল দুর্গাপুর ও ধোবাউড়া ঘুরে দেখে। এরপর এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হলো। এতে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় অপরিকল্পিতভাবে সাদা মাটি ও বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর নানা দিক তুলে ধরা হয়।

সভায় জানানো হয়, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় স্থানীয় হাজং, মান্দি ও বাঙালি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ দলের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বেসরকারি সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, সাংবাদিক নজরুল কবীর, রাজীব নূর ও মুহাম্মদ হাবীব, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা প্রমুখ।

সভায় নাগরিক প্রতিনিধিদলের সরেজমিন পরিদর্শনের ভিত্তিতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন রোবায়েত ফেরদৌস। আলোচনায় অংশ নেন সংস্কৃতিকর্মী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা মতিলাল হাজং, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমীলাসহ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

সভায় মতিলাল হাজং বলেন, দুর্গাপুরে সাদা মাটির উত্তোলনের ফলে অনেক গারো, হাজং ও হাদি জনগোষ্ঠীর মানুষ উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। আদিবাসীদের জমির কাগজপত্র নেই, এটাই হলো তাদের দোষ। টিলায় থাকে কিন্তু কাগজপত্র নেই। তিনি বলেন, ‘অনেক কোম্পানি আছে, যারা ৫০০ টনের অনুমতি নিয়ে পাঁচ হাজার টন উত্তোলন করে, যা কেউ তদারকি করে না। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে।’

নাগরিক প্রতিনিধিদলের ন্যায্য দাবি সরকারের আমলে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা নু মং। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকদের উচিত অবৈধভাবে সাদা মাটির পাহাড় খননের বিরুদ্ধে কাজ করা।

দুর্গাপুর ও ধোবাউড়া পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘আগে সোমেশ্বরীর (নেত্রকোনার দুর্গাপুরে) পানি পরিষ্কার ছিল, কিন্তু এবার গিয়ে দেখলাম, তা ঘোলা হয়ে গেছে।’

সাদা মাটির পাহাড় জাতীয় সম্পদ হলেও স্থানীয় ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকা, বসবাস ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে দাবি জানান জাকির হোসেন।

সভায় নাগরিক প্রতিনিধিদলের পক্ষে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রিট পিটিশনের পরিপ্রে‌ক্ষিতে দুর্গাপুরে সাদা মাটির পাহাড়ে খননের কাজ বন্ধ থাকলেও ধোবাউড়ায় অপরিকল্পিতভাবে টিলা কেটে সাদা মাটি আহরণ চলছে। এরই মধ্যে সেখানকার প্রতিবেশ ও জনজীবন বিপন্নের মুখোমুখি। এ জন্য অপরিকল্পিতভাবে যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের আয়োজন বন্ধ করাসহ বাস্তুচ্যুত আদিবাসী ও বাঙালি পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় প্রতিনিধিদল। তারা বলছে, সোমেশ্বরী নদী থেকে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তা-ও পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব যথাযথ নজরদারির আওতায় এনে সাদা মাটি ও বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।