নেত্রকোনায় ১৬২ কোটি টাকার আমনের ক্ষতি

নেত্রকোনায় গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির আমন তলিয়ে গেছে। নেত্রকোনা-সিধলী সড়কের রাজাপুর এলাকায়
প্রথম আলো

নেত্রকোনায় পাহাড়ি ঢলে ১০টি উপজেলায় অন্তত ২০ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির আমন চারা নিমজ্জিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এর ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে ১৬২ কোটি টাকা।
গত মঙ্গলবার থেকে গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় চতুর্থবারের মতো নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
স্থানীয় কৃষক, জেলা কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বর্ষায় সদর, বারহাট্টা, মদন, মোহনগঞ্জ, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, খালিয়াজুরি উপজেলায় পরপর চারবার বন্যা হয়। এতে আমন বীজতলা, শাকসবজির খেত, পুকুরের মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পায়। পানিতে আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, পানিতে এ পর্যন্ত ১০টি উপজেলায় ২০ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বারহাট্টা উপজেলায়, প্রায় ৬ হাজার হেক্টর।

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জানান, ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫২ ধানের চারা পানির নিচে প্রায় ১৪ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম। নিমজ্জিত প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকেরা ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫০ জাতের ধান আবাদ করেন। এসব ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। আর বাকি ১৪ হাজার ২০৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬৪ হাজার ৮০০ টন ধান উৎপন্ন হওয়ায় কথা ছিল। সে হিসাবে প্রায় ৪৫ হাজার কৃষক পরিবারের ১৬২ কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও জানান, জেলায় ৪ লাখ ৩ হাজারের মতো কৃষক পরিবার রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়।

নেত্রকোনায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ২০ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ছবিটি কলমাকান্দার কৈলাটি এলাকা থেকে তোলা
প্রথম আলো

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, গতকাল জেলায় বৃষ্টিপাত হয় ১০ মিলিমিটার। ধনু নদ ছাড়া জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কমতে শুরু হচ্ছে। ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে এখনো পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫ দশমিক ৬১ মিটার।
এদিকে পানিতে এখনো নেত্রকোনা-সিধলী সড়কের রাজাপুর, বাসাডিসহ বেশ কিছু এলাকা, কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন, রংছাতি, লেঙ্গুরা, বড়খাপন, কৈলাটি, পোগলা, খারনৈ, বারহাট্টার রায়পুর, বাউসীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। এতে পথচারী ও যান চলাচলকারীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।