নোয়াখালীতে নারীকে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জনের বিচার শুরু

আদালত
প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতনের ঘটনায় ১৪ আসামির মধ্যে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) জয়নাল আবদীনের আদালতে এ অভিযোগ গঠন করা হয়।

অপর আসামি একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামুনুর রশীদ আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ গঠন করা ১৩ আসামি হলেন দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু, জামাল উদ্দিন ওরফে প্রবাসী জামাল, নুর হোসেন ওরফে বাদল, মো. আবদুর রহিম, মোহাম্মদ আলী ওরফে আবু কালাম, ইস্রাফিল হোসেন ওরফে মিয়া, মাঈন উদ্দিন ওরফে সাজু, সামছুদ্দিন ওরফে সুমন, আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া ওরফে লম্বা চৌধুরী, মো. আরিফ, নুর হোসেন ওরফে রাসেল, আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহাগ ও মো. তারেক।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর পৌনে ১২টায় আদালতে নারীকে নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে আসামি ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়। আদালত আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন মঞ্জুর করেন।

এরপর দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামুনুর রশীদ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পড়ে শোনান। এ সময় আসামিরা সমস্বরে নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করেন। এরপর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন এবং মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ ১৮ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারণ করেন।

আজ একই আদালতে নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর রাতে ঘরে ঢুকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য গ্রহণ পেছানো হয় এবং আগামী ১৮ এপ্রিল ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি মামুনুর রশীদ। তাঁকে সহায়তা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাছুল, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির স্থানীয় প্রতিনিধি কল্পনা রানী দাশসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন শাহদাত হোসেন ও সহিদ উল্যাহ।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জে নিজ বাড়িতে ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁরা নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতন করে তা ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। দেলোয়ার বাহিনীর অব্যাহত হুমকিতে ওই নারী বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করেন। দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা গত ৪ অক্টোবর নির্যাতনের ওই ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। ওই রাতে নারী নিজে বাদী হয়ে দেলোয়ার বাহিনীর ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় নারী নির্যাতন আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতনের ঘটনায় গত ১৫ ডিসেম্বর আদালতে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।