নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: আদালতে সেই রাতের বর্ণনা দিলেন ভুক্তভোগী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন ভুক্তভোগী সেই নারী (৩৭)। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক (জেলা জজ) জয়নাল আবদীন মামলার বাদীর সাক্ষী গ্রহণ করেন।
এদিকে বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের কোর্ট হাজতে নেওয়ার পথে কর্তব্যরত গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর চড়াও হন দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা পুলিশের সামনেই একাধিক সাংবাদিকের হাত থেকে ক্যামেরা, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁরা সাংবাদিকদের নানা গালমন্দও করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মামুনুর রশিদ ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতনের মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালত থেকে বেরিয়ে দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরের আলোচিত ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতনের ঘটনায় হওয়া মামলার বিচারকাজ আরও এক ধাপ এগুলো। তিনি বলেন, নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী নারী।
পিপি মামুনুর রশিদ বলেন, বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণকালে আদালতে মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে, যাঁদের মধ্যে চারজন আসামি পলাতক। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া একজন আসামির (স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ) বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আদালত তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে একই আদালতে গতকাল বুধবার একই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা আরেকটি মামলায় সাক্ষী দেন তিনি। বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার এক বছর আগে দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে ওই নারী আদালতে ধর্ষণের অভিযোগে সাক্ষী প্রদান করেন।
২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকার দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন। পরে ওই নারীকে হামলাকারীরা কুপ্রস্তাব দেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ধারণ করা ভিডিও চিত্র গত ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন, যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় ওই দিন (৪ অক্টোবর) রাতেই নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান সহযোগী নুর হোসেন ওরফে বাদলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে আসামি করে থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা রেকর্ড করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। আর অপরটি রেকর্ড করা হয় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। এরপর একই নারী দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তাঁর প্রধান সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে এক বছর আগে ধর্ষণের একটি মামলা করেন। তিনটি মামলাই তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই।
সূত্র জানায়, সাক্ষ্য গ্রহণকালে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাছুল মামুন। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুর শহিদ, জসিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। আদালতে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদসহ বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি ও জেলা নারী অধিকার জোটের নেতারা। মামলার পরবর্তী তারিখ ২৩ আগস্ট।