নৌকা ও আ.লীগের ‘বিদ্রোহী’ পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ওসিসহ আহত ৩৩

নৌকা ও আ.লীগের ‘বিদ্রোহী’ পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত পুলিশ সদস্যদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আজ সন্ধ্যায় বরগুনার পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
প্রথম আলো

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণের সময় নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পাথরঘাটা থানার ওসি, তাঁর বডিগার্ডসহ ছয়জন পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশের ওই ছয়জন পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ সময় পৌরসভার বিএফডিসি এলাকায় র‍্যাব-৮-এর একটি পিকআপের গাড়ির কাচ ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য ছাড়াও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল (নারকেলগাছ প্রতীক) ও নৌকা প্রতীকের সমর্থক মিলিয়ে অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছেন।

এ সময় পৌরসভার বিএফডিসি এলাকায় র‍্যাব-৮-এর একটি পিকআপের গাড়ির কাচ ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল আজ বিকেলে পাথরঘাটা শহরে নারকেলগাছ প্রতীকের লিফলেট বিতরণ করছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে লিফলেট বিতরণকালে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও নারকেলগাছ সমর্থক-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় পুলিশ উত্তেজনা প্রশমিত করে। এর আধঘণ্টা পর মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে লাঠি, পাইপসহ তিন শতাধিক লোক নিয়ে পাথরঘাটা থানাসংলগ্ন বিআরটিসি কাউন্টার এলাকায় গণজমায়েতের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে পাথরঘাটা থানার ওসি মো. শাহাবুদ্দিনসহ পুলিশের ছয়জন আহত হন। অপর দিকে এ সময় মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলসহ অন্তত ১২ জন এবং নৌকার সমর্থক ৫ জন আহত হন।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন পাথরঘাটা থানার ওসি মো. শাহাবুদ্দিন (৪০), ওসির বডিগার্ড মাসুম বিল্লাহ (২৫), ওসির ড্রাইভার মোহাম্মদ রাশেদ (২৮), কনস্টেবল সাজেদুল ইসলাম (২১), এসআই তারিকুল ইসলাম ও এসআই মো. রাজেত মিয়া।
পাথরঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) মো. সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সোহেলের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন।

নৌকা ও আ.লীগের ‘বিদ্রোহী’ পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত পুলিশ সদস্যরা বরগুনার পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন। আজ সন্ধ্যায়
প্রথম আলো

এদিকে এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের বিএফডিসি এলাকার (৬ নম্বর ওয়ার্ড) বাড়িতে নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ সময় ওই বাড়ির সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে এ সময় প্রায় ৫০০ লোকের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন চলছিল। নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি চেয়ার ও শতাধিক প্লেট-গ্লাস ভাঙচুর করেন। ওই বাড়িতে থাকা মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করে। এই হামলায় মোস্তাফিজুর পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) মো. আনোয়ার হোসেন আকনের বক্তব্য জানতে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের বাসায় হামলার পর দৃশ্য। আজ সন্ধ্যায়
সংগৃহীত

সন্ধ্যার দিকে মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। আটক বাকি দুজন হলেন মোস্তাফিজুরের কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোহাম্মদ আসাদ। রাত আটটার দিকে ওসি (তদন্ত) মো. সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে পুলিশ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সাঈদ আহমেদ এ কথা যখন জানান, তখন মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান থানায় ছিলেন।

বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক রাত ৯টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পাথরঘাটা থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।